‘চিয়া’ শব্দটি মূলত ‘শক্তি’ অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং এর বীজের পুষ্টিমানের (Chia Seeds) জন্য এটি এমন একটি নাম পেয়েছে। চিয়া বীজে রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চিয়া বীজে প্রায় ১৫-২৫% প্রোটিন, ৩০-৩৩% ফ্যাট, ৩১-৩৫% লিপিড, ১৮-৩০% ডায়েটারি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এবং খনিজ উপাদান থাকে। এর উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর, এটি চাষে আগ্রহী কৃষকদের কাছে একটি লাভজনক ফসল হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত ভারতীয় কৃষি আবহাওয়ায় চিয়া চাষে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।(Chia Seeds)
চিয়া বীজের পুষ্টিমানের জন্য এটি ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত।(Chia Seeds) এর মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চিয়া বীজ শরীরে সহজেই শোষিত হয় এবং এটি আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য, কোলেস্টেরল কমানো, ওজন কমাতে সাহায্য করে। একদিকে যেমন এটি শরীরের টক্সিক পদার্থ বের করে, অন্যদিকে এটি গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল (পেটের) সমস্যা সমাধানেও সহায়তা করে।(Chia Seeds)
আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিয়া বীজ খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষত মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং চিলি। তবে, ভারতেও চিয়া চাষের সম্ভাবনা রয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যে চিয়া চাষ শুরু হয়েছে। তবে, ভারতের কৃষকদের জন্য এই ফসলের ব্যাপক চাষের জন্য আরও গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রয়োজন।(Chia Seeds)
চিয়া বীজের পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে থাকে:
৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
৪০৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
৩৩৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
৮৬০ মিলিগ্রাম ফসফরাস
৭ মিলিগ্রাম আয়রন
৪.৪ মিলিগ্রাম জিঙ্ক
চিয়া বীজে ৬০% ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা এলডিএল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের সুস্থতা এবং সুস্থ হৃদয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এমনকি এই বীজের ফাইবার আমাদের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।(Chia Seeds)
চিয়া চাষের আবহাওয়া এবং উপযুক্ত সময়
চিয়া বীজের চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ১১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গড় তাপমাত্রা ১৬ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হওয়া উচিত। শীতকাল চিয়া চাষের জন্য আদর্শ সময়। এই ফসলটি বিভিন্ন ধরনের মাটিতে চাষ করা যেতে পারে, তবে হাল্কা থেকে মাঝারি বেলে মাটি বা বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। এটি অম্ল মাটিতেও চাষ করা যায়।(Chia Seeds)
চিয়া বীজ রোপণের পর প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হতে শুরু করে এবং সাধারণত ১০০-১৫০ দিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। চিয়া চাষের জীবনচক্র বিভিন্ন অঞ্চলের অক্ষাংশ এবং উচ্চতার ওপর নির্ভর করে।
চিয়া চাষের সুবিধা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
চিয়া চাষের মাধ্যমে কৃষকরা একটি লাভজনক ফসল পেতে পারেন। প্রতি হেক্টর জমিতে চিয়া চাষ করলে লাখ টাকার মতো আয় করা সম্ভব। চিয়া বীজের চাষ এবং এর ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। ভারতের মতো পুষ্টিহীনতা সমস্যায় আক্রান্ত দেশে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উৎস হতে পারে।(Chia Seeds)
চিয়া বীজের বাজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিদেশে রফতানি করার সুযোগও তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এর চাষ এখনও সীমিত হলেও, এটি আরও বিস্তৃত হতে পারে এবং কৃষকদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।