কলকাতা ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গল প্রেমে ডুবে বার্তা দিলেন অ্যালভিটো

কলকাতা লিগের ডার্বি মানেই আবেগ, উত্তেজনা, ঐতিহ্য। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে সেই জৌলুসের রূপ। ঘরোয়া লিগের ডার্বি মানেই জুনিয়র বা রিজার্ভ দলের মুখোমুখি…

Alvito D’Cunha’s Passionate Message Before Kolkata Derby: Jersey Above All

কলকাতা লিগের ডার্বি মানেই আবেগ, উত্তেজনা, ঐতিহ্য। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে সেই জৌলুসের রূপ। ঘরোয়া লিগের ডার্বি মানেই জুনিয়র বা রিজার্ভ দলের মুখোমুখি লড়াই। কিন্তু অ্যালভিটো ডি কুনহার (Alvito D Cunha) কাছে ডার্বির মানে, লাল-হলুদ বনাম সবুজ-মেরুন জার্সির লড়াই। কে খেলছে, সেটা মুখ্য নয়। তাঁর মতে, “জার্সিটাই আসল। জিতলে জার্সি জিতবে, হারলেও জার্সিই হারবে।”

ডার্বিকে ঘিরে ঠিক এই বার্তাই দিলেন প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল তারকা অ্যালভিটো ডি কুনহা। কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ম্যাচের আগে এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ফিরে গেলেন নিজের ফুটবল-জীবনের স্মৃতির পাতায়। জানালেন, কীভাবে তিনি গোয়া থেকে এসে হয়ে উঠেছিলেন বাংলার ‘ঘরের ছেলে’।

   

২০০২ সালে সালগাওকর ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেন অ্যালভিটো। এরপর টানা ১৪ বছর লাল-হলুদ জার্সিতে খেলেছেন। বলেন, ‘‘প্রথম মরসুমে হোমসিক ছিলাম। ভেবেছিলাম ফিরে যাব গোয়ায়। বেশ কিছু ক্লাবও প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু একদিন এক ম্যাচের পর বহু সমর্থক এসে আমার পা ছুঁয়ে বলল, ‘দাদা, ছেড়ে যেয়ো না’। তখনই বুঝলাম, এই ভালোবাসা কোথাও পাব না।’’

নিজের প্রথম ডার্বির কথাও তুলে ধরেন অ্যালভিটো। বলেন, ‘‘ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গল কর্তা বাবু ভট্টাচার্য এসে বলেছিলেন, ডার্বি জিততেই হবে। আমি অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, সবাই তো চ্যাম্পিয়ন হতে চায়, এরা শুধু ডার্বির কথা বলছে কেন? মাঠে গিয়ে হাজার হাজার দর্শক দেখে বুঝলাম কেন এই ম্যাচ এত গুরুত্বপূর্ণ।’’

ডার্বিতে করা নিজের সেরা গোলের স্মৃতিও ভাগ করে নেন অ্যালভিটো। তাঁর পছন্দ ২০০৭ ও ২০০৮ সালের দুটি ম্যাচ। একটি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল হারে ৪-৩ ব্যবধানে, অন্য ম্যাচে ২-১। তবে দুই ম্যাচেই গোল করেন অ্যালভিটো। বলেন, ‘‘দল হারলেও আমি খুশি ছিলাম, কারণ ডার্বিতে গোল করেছি। দর্শকরাও খুশি হয়ে মাঠ ছেড়েছেন, সেটাই বড় জিনিস।’’

Advertisements

তবে আজকের ডার্বি চিত্র দেখে হতাশ তিনি। তাঁর মতে, আইএসএল আসার পর দুই প্রধান কলকাতা লিগে রিজার্ভ দল নামায়। সিনিয়ররা খেলেন না। এতে ডার্বির গরিমা নষ্ট হয়। অ্যালভিটোর কথায়, ‘‘আজকাল ডার্বিতে সিনিয়র প্লেয়ারদের দেখা যায় না। কয়েকটা ম্যাচ খেললে কী এমন ক্ষতি? বরং জুনিয়রদের অনেক কিছু শেখানো যাবে।’’

প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল তারকার ক্ষোভ গিয়ে পড়ে দুই দলের কোচদের দিকেও। ইস্টবেঙ্গলের বিনো জর্জ ও মোহনবাগানের ডেগি কার্ডোসকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। বলেন, ‘‘এঁরা তো কোনওদিন ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের হয়ে খেলেননি। ফলে তাঁরা ডার্বির গুরুত্ব বুঝিয়ে উঠতে পারেন না। প্লেয়ারদের বুঝতে হবে, এটা একটা ম্যাচ নয়, আবেগের লড়াই।’’

একই সঙ্গে অ্যালভিটোর আফসোস, এখন আর পিকে ব্যানার্জি বা অমল দত্তের মতো কেউ ড্রেসিংরুমে অনুপ্রেরণার বার্তা দেন না। বলেন, ‘‘প্লেয়ারদের বোঝাতে হবে, ডার্বি কী জিনিস। সেই দায়িত্ব সিনিয়রদের। দরকার হলে পুরনো প্লেয়ারদের ডেকে আনুন ড্রেসিংরুমে, একটা কথাই অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।’’

বর্তমান পরিস্থিতিতে মোহনবাগান কলকাতা লিগের পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকলেও, অ্যালভিটোর আশা, শেষ হাসি হাসবে তাঁর প্রিয় ইস্টবেঙ্গল। বলেন, ‘‘পয়েন্ট টেবিল বড় কথা নয়। ডার্বি মানে সম্মান, গর্ব, জার্সির জয়। সেটা আজও একই রকম আছে। জার্সির জন্য লড়াই করলেই জয় আসবে।’’