লোকসভা অধিবেশনের শুরুতেই বিচারপতি বর্মার অপসারণের প্রস্তাব

কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু (Lok Sabha) ঘোষণা করেছেন যে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে অপসারণের প্রস্তাব প্রথমে লোকসভায় উত্থাপিত হবে। এই প্রস্তাবটি…

Lok Sabha for justice verma

কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু (Lok Sabha) ঘোষণা করেছেন যে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে অপসারণের প্রস্তাব প্রথমে লোকসভায় উত্থাপিত হবে। এই প্রস্তাবটি বিচারপতি বর্মার সরকারি বাসভবনে আগুন লাগার ঘটনার পর পুড়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর এসেছে।

রিজিজু জানিয়েছেন, বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের সিদ্ধান্তটি সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণের প্রস্তাবটি লোকসভায় উত্থাপিত হবে এবং পরবর্তীতে রাজ্যসভায় এটি সমর্থিত হবে।

   

সকল রাজনৈতিক দল একমত যে এটি একটি যৌথ সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু করা কেবল সরকারের নয়, বরং সমগ্র সংসদের সম্মিলিত দায়িত্ব।

২০২৫ সালের ২১ জুলাই, লোকসভার ১৫২ জন সাংসদ, যাদের মধ্যে বিজেপি নেতা রবি শঙ্কর প্রসাদ, অনুরাগ ঠাকুর, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস নেতা কে.সি. ভেনুগোপাল, এনসিপি (এসপি) সদস্য সুপ্রিয়া সুলে সহ অন্যান্য দলের সাংসদরা, লোকসভার স্পিকার ওম বিরলার কাছে বিচারপতি বর্মার অপসারণের জন্য একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

এই প্রস্তাবটি সংবিধানের ১২৪, ২১৭ এবং ২১৮ অনুচ্ছেদের অধীনে জমা দেওয়া হয়েছে। একটি বিচারপতির অপসারণের প্রস্তাবের জন্য লোকসভায় ন্যূনতম ১০০ জন সাংসদ এবং রাজ্যসভায় ৫০ জন সাংসদের স্বাক্ষর প্রয়োজন। রিজিজু জানিয়েছেন, “স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ চলছে এবং ইতিমধ্যে ১০০-এর বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে।”

এই ঘটনার সূত্রপাত হয় গত মার্চ মাসে, যখন বিচারপতি বর্মার দিল্লির সরকারি বাসভবনে আগুন লাগার ঘটনার পর জরুরি পরিষেবা প্রদানকারীরা পুড়ে যাওয়া নগদ টাকার বান্ডিল উদ্ধার করে। এই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটি ইন-হাউস তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, যারা জানায় যে বিচারপতি এবং তার পরিবারের স্টোররুমের উপর সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ছিল, যেখানে টাকাগুলি পাওয়া গিয়েছিল।

তদন্তে বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, যা তাকে অপসারণের জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়। যদিও বিচারপতি বর্মা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন, তবুও সংসদে তার অপসারণের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।

Advertisements

রিজিজু জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া সরকারের একক উদ্যোগ নয়, বরং সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, “বিচার বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর এবং সংবেদনশীল বিষয়। এই বিষয়ে আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।” তিনি আরও জানান, লোকসভার স্পিকার ওম বিরলা শীঘ্রই একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করবেন।

যার মধ্যে থাকবেন একজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, একজন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে, যা সংসদে উপস্থাপিত হবে। এরপর উভয় কক্ষে আলোচনা এবং ভোটাভুটির মাধ্যমে বিচারপতি বর্মার অপসারণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাজ্যসভায় ৬৩ জন বিরোধী সাংসদ একটি অনুরূপ প্রস্তাব জমা দিলেও, তা গৃহীত হয়নি। রাজ্যসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় এই প্রস্তাবটি গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু সরকারের সম্মতি ছাড়াই এই পদক্ষেপের জন্য তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন, এবং একই রাতে তিনি পদত্যাগ করেন। বর্তমানে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ এই বিষয়ে সরকার এবং সংসদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

দিঘায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রে নামা নিষেধ – পর্যটকদের জন্য সতর্কবার্তা প্রশাসনের

এই ঘটনা বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলেছে। বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তার অপসারণের প্রস্তাব ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সংসদের এই যৌথ উদ্যোগ বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।