আলুর দাম কমে ধস, পশ্চিমবঙ্গে চরম সঙ্কটে কৃষক ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা

পশ্চিমবঙ্গে আলুর (Potato Price) হু-হু করে কমে যাওয়া দাম চরম সংকট ডেকে এনেছে রাজ্যের কৃষক এবং কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের জীবনে। বর্তমানে রাজ্যের কোল্ড স্টোরেজগুলিতে রেকর্ড…

Life of a Hooghly Potato Farmer

পশ্চিমবঙ্গে আলুর (Potato Price) হু-হু করে কমে যাওয়া দাম চরম সংকট ডেকে এনেছে রাজ্যের কৃষক এবং কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের জীবনে। বর্তমানে রাজ্যের কোল্ড স্টোরেজগুলিতে রেকর্ড ৭০.৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে, যার প্রায় ৮০ শতাংশই কৃষক নিজেরাই সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু বাজারে হঠাৎ করে দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকদের বড়সড় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

মে মাসের শুরুতে ‘জ্যোতি’ জাতের আলুর দাম ছিল ১৫ টাকা প্রতি কেজি—যা সরকারের নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) হিসেবেই ছিল। কিন্তু এখন সেই আলুই বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯ টাকা প্রতি কেজি দরে। এর ফলে প্রতি কুইন্টালে ৪০০–৫০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।

   

বিশেষ করে বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কোল্ড স্টোরেজ গেটের সামনে দাম সবচেয়ে বেশি পড়েছে। বহু কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং পরবর্তী মরশুমে আলুর চাষ কমানোর কথা ভাবছেন।

পশ্চিমবঙ্গ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (WBCSA) এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছে, যদি এইভাবে চলতে থাকে, তাহলে রাজ্যের ১০,০০০ কোটি টাকার আলু নির্ভর অর্থনীতি বড়সড় বিপদের মুখে পড়বে। সংস্থার সভাপতি সুনীল কুমার রানা বলেন, “যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে তাঁরা পরবর্তী বছর চাষে অনীহা দেখাতে পারেন, যার ফলে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং কোল্ড স্টোরেজও খালি পড়ে থাকবে।”

সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে দাবির তালিকা

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে অ্যাসোসিয়েশন একাধিক দাবি তুলেছে রাজ্য সরকারের কাছে। তাদের দাবিগুলি হলো:

MSP-তে সরকার সরাসরি ১৫ টাকা প্রতি কেজি দরে আলু কেনা শুরু করুক।

Advertisements

আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলু রপ্তানি পুনরায় চালু করা হোক।

মিড-ডে মিল ও অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে আলু অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

স্টক রাজ্যের বাইরে পাঠাতে কৃষকদের ট্রান্সপোর্ট ভর্তুকি দেওয়া হোক।

এখন অনেক কোল্ড স্টোরেজ পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে নতুনভাবে মজুত করার আর জায়গা নেই। এই অবস্থায় কৃষকদের কাছে কোনো বিকল্প নেই—তাঁরা বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা ফসল নষ্ট হওয়ার ভয়ে দিন গুনছেন।

আলুর বর্তমান বাজার পরিস্থিতি শুধু কৃষকদের নয়, বরং গোটা রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদন চক্রকে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপ না হলে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান কৃষিপণ্য আলু উৎপাদন এক গভীর সঙ্কটে পড়বে।