হাতে আর মাত্র দু’মাস সময়। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব—দুর্গাপুজো। শহরজুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই উৎসবের প্রস্তুতি। বিশেষ করে বড় বাজেটের পুজো কমিটিগুলি তো অনেক আগে থেকেই কাজে লেগে পড়েছে। প্যান্ডেল তৈরি থেকে শুরু করে আলোর পরিকল্পনা, থিমের খসড়া, শিল্পীদের সময় নির্ধারণ—সবই চলছে জোরকদমে। এই পরিস্থিতিতে শহরের একাধিক নামী পুজো কমিটির সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, আগামী ৩১ জুলাই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই বৈঠক আয়োজিত হবে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন কলকাতার প্রথম সারির দুর্গাপুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধিরা। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন কলকাতা পুলিশ, দমকল, পরিবহণ দফতর, কলকাতা পুরসভা এবং সিইএসসি-র শীর্ষ আধিকারিকরা। পুজোকে কেন্দ্র করে শহরের যেসব পরিষেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাদের সবাইকে নিয়েই বসছে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।
মূলত দুর্গাপুজোর সময় শহরে জনজোয়ার সামাল দেওয়া, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ পরিষেবা, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার পর্যালোচনা, এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাই এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। প্রতি বছর কলকাতায় দুর্গাপুজোর সময় কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। থিমভিত্তিক প্যান্ডেল, আলোর সাজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের টানে শুধু শহরবাসী নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ কলকাতায় আসেন। স্বাভাবিকভাবেই, এত বড় জনসমাগম সামাল দিতে প্রশাসনিক স্তরে চূড়ান্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবেই দুর্গাপুজোকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতিতে নজর রাখেন। কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, তিনি একাধিক পুজো উদ্বোধনে অংশ নিচ্ছেন, শিল্পীদের উৎসাহ দিচ্ছেন, এমনকি মিছিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাঁটতেও দেখা যাচ্ছে তাঁকে। এ বছরও সেই ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়।
তবে, এবারের বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রতি বছর দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হয়। গত বছর এই অনুদানের পরিমাণ ছিল প্রতি পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা। এ বছর কি সেই অনুদানের অঙ্ক আরও বাড়বে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুজো কমিটির প্রতিনিধিদের মনে। অনেকে মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ দুর্গাপুজো, ফলে রাজ্য সরকার সম্ভবত অনুদান বাড়িয়ে দিতে পারে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে।
এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কেবল প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও সহযোগিতার কথাই বলবেন না, পাশাপাশি পুজো কমিটিগুলির সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে। যেমন—থিমে পরিবেশবান্ধব বার্তা দেওয়া, সুরক্ষিত কাঠামো তৈরি, শব্দ দূষণ রোধে উদ্যোগ এবং যানবাহন চলাচলে সচেতনতা তৈরি করা ইত্যাদি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, এই বৈঠক শুধু পুজোর প্রস্তুতির একটি প্রশাসনিক পর্ব নয়, বরং বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবকে আরও মসৃণ ও নিরাপদ করে তুলতে সরকারের এক সমন্বিত প্রয়াস। এবার শুধু ৩১ জুলাইয়ের সেই আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে নজর সকলের—তিনি অনুদান বাড়ানোর ঘোষণা করেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।