২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বুথ লেভেল আধিকারিকদের (BLO) প্রশিক্ষণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার নদিয়া, দুই ২৪ পরগণা এবং মুর্শিদাবাদ জেলার (Election Commission) শতাধিক ব্লকের BLO-দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়া নজরুল মঞ্চে শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য BLO-দেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই প্রশিক্ষণকে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনীর প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এই প্রশিক্ষণের পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে(Election Commission)
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপের পর রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে(Election Commission) জল্পনা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে যখন রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ভোটার তালিকার সংশোধনের নামে নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গেও বিহারের মতো একটি ‘বিশেষ অভিযান’(Election Commission) চালানোর পরিকল্পনা করছে। শাসক দল তৃণমূলের দাবি, কমিশন যদি অন্য রাজ্যে বিজেপির পক্ষ নিয়ে কাজ করতে পারে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে একই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। এই অভিযোগের সপক্ষে তারা আরও বলেন, “এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কাজ করছে, যা ভবিষ্যতে ভোটের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।”(Election Commission)
এদিকে, কমিশন সূত্রে জানা গেছে, BLO-দের প্রশিক্ষণ মূলত একটি রুটিন প্রক্রিয়া, যা নির্বাচন পরিচালনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই প্রশিক্ষণ আসলে বুথ লেভেল অফিসারদের নির্বাচনী কাজের জন্য প্রস্তুত করার একটি কার্যক্রম। কমিশনের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে বিএলও-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া, এই বছর কমিশন নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে কোনও চুক্তিভিত্তিক কর্মী দিয়ে নির্বাচন পরিচালিত হবে না, ফলে বহু নতুন BLO নিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে তাদের প্রশিক্ষণ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।(Election Commission)
বুথ লেভেল অফিসারদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, কমিশন রাজ্য সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়ে BLO এবং তাদের তদারককারীদের জন্য বেতনবৃদ্ধি ও ‘বিশেষ অভিযানের’ জন্য অতিরিক্ত ২,০০০ টাকা ‘ইনটেনসিভ’ ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৫ সালে নির্ধারিত ভাতার পরিমাণ সংশোধন করে, কমিশন BLO-দের জন্য বার্ষিক ১২,০০০ টাকা এবং তাদের তদারককারীদের জন্য ১৮,০০০ টাকা ভাতা নির্ধারণ করেছে। এই অর্থের মধ্যে একটি অংশ বরাদ্দ করা হয়েছে ‘বিশেষ সারসংক্ষেপ সংশোধন (এসএসআর)’ বা ‘বিশেষ সংশোধন (এসআর)’ বা অন্য কোনও ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালনার জন্য, তবে এই বিশেষ অভিযানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা চিঠিতে দেওয়া হয়নি(Election Commission)
এই নির্দেশনা দিয়ে কমিশন রাজ্য সরকারের কাছে যে প্রশ্ন তুলেছে তা হলো, ভোট এখনও প্রায় ৯-১০ মাস দূরে, তাহলে এখন কেন এবং কী কারণে ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালনা করতে চাইছে কমিশন? এই ‘বিশেষ অভিযান’ কি ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন? যদি তা হয়, তাহলে তা কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে?
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী পরিবেশ অনেকটাই উত্তপ্ত হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস এই প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য পদক্ষেপগুলির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছে, এবং তারা মনে করছে, এটি বিজেপির নির্বাচনী সুবিধার জন্য পরিচালিত হতে পারে। তারা দাবি করছে, কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কাজ করছে, এবং এর ফলে রাজ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।
রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন এবং BLO-দের প্রশিক্ষণ বিষয়ে কমিশন যেভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা অনেকেরই মনে প্রশ্ন তৈরি করছে। বিশেষত, যখন কমিশন স্পষ্টভাবে জানায়নি যে ‘বিশেষ অভিযান’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে। তৃণমূল এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এভাবে কমিশনের পদক্ষেপকে কটাক্ষ করে বলছে, এর মাধ্যমে কমিশন রাজ্যে ভোটের পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে।
সব মিলিয়ে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমিশনের নতুন পদক্ষেপ, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। এটি শুধু রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করছে, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগও সৃষ্টি করেছে, যারা মনে করছেন যে নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্য কিছু রয়েছে।