ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বেসরকারীকরণের সম্ভাবনা নিয়ে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে (East West Metro)। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্র সুদীপ রাহা এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য করে বলেছেন, “বিজেপি সরকার রেল থেকে তেল সবকিছুরই বেসরকারিকরন করেছে। তিনি আরও বলেছেন সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন মোদী। তাহলে সরকারি প্রধানমন্ত্রী রেখে লাভ কি ?”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারীকরণ নীতির বিরুদ্ধে তাদের তীব্র বিরোধিতা স্পষ্ট করেছে। আগামী ৩১ জুলাই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোন বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের জন্য দরপত্র খোলা হবে। এই খবরের পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার ধাপে ধাপে এই মেট্রো প্রকল্পের পুরো পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চলেছে। এই সম্ভাবনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, কারণ বেসরকারীকরণের ফলে ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, যা কলকাতা মেট্রোর গ্রিন লাইন নামেও পরিচিত, ভারতের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত মেট্রো সুড়ঙ্গ। এই প্রকল্পটি হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ১৬.৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে ১২টি স্টেশন রয়েছে, যার মধ্যে ৬টি উত্তোলিত এবং ৬টি ভূগর্ভস্থ। এই মেট্রো লাইনটি কলকাতার যানজট সমস্যা সমাধানে এবং দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের এই বেসরকারীকরণ নীতি শুধুমাত্র ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রেলের সামগ্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করার একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, বিজেপি সরকার রেলকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিয়ে জনগণের সুবিধার পরিবর্তে ব্যবসায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি একজন সফল রেলমন্ত্রী ছিলেন, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। এই প্রকল্পটি বেশ কয়েকবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে বউবাজার এলাকায় সুড়ঙ্গ খননের সময় জলের প্রবেশ এবং মাটি ধসের কারণে। ২০১৯ এবং ২০২২ সালে বউবাজারে ধসের ঘটনায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।
এই সমস্যাগুলির সমাধানে মেট্রো কর্তৃপক্ষ লোহার পাত দিয়ে সুড়ঙ্গকে সুরক্ষিত করার মতো উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, এই প্রকল্পের গুরুত্ব এবং জনসাধারণের উপর এর প্রভাব বিবেচনা করে, বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
তৃণমূলের দাবি, এই বেসরকারীকরণের ফলে মেট্রোর পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন, যারা এই প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেতারা বলছেন যে, বেসরকারি সংস্থার হাতে দায়িত্ব দেওয়া হলে লাভের হিসাবই প্রাধান্য পাবে, জনগণের সুবিধা নয়।
এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, বেসরকারীকরণের ফলে পরিষেবার মান উন্নত হতে পারে, তবে ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা তাদের উদ্বিগ্ন করছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের নেতারা এই পদক্ষেপকে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির অংশ হিসেবে দেখছেন।
তারা দাবি করছেন, রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনপরিষেবাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সমান।শেষ পর্যন্ত, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বেসরকারীকরণ নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষয়ে তাদের বিরোধিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা করেছে।
শিয়ালদহ ডিভিশনে ফের ট্রেন বাতিল, সপ্তাহান্তে দুর্ভোগের আশঙ্কা
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে। এই ঘটনা কলকাতার জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এর ভবিষ্যৎ ফলাফল শহরের যাতায়াত ব্যবস্থার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।