পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নলহাটি থানার অন্তর্গত কৈঠা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ান (Indian Army Jawan ) জিয়ারুল শেখ বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী হাবিবা খাতুনকে বিয়ে করে তাঁর জন্য জাল নথিপত্র তৈরি করেছেন। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, পেশায় সেনা জওয়ান জিয়ারুল শেখ প্রথমে পুনেতে কর্মরত থাকার সময় পরিচিত হন হাবিবা খাতুন নামে এক তরুণীর সঙ্গে। হাবিবার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে পুনেতে একটি দর্জির দোকানে কাজ করছিলেন। সেই সময়েই জিয়ারুল শেখের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তিনি হাবিবাকে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসেন এবং বিয়ে করেন।
এই বিয়ের জন্য জিয়ারুল তাঁর প্রথম স্ত্রী রোশেনারা খাতুনকে ‘তিন তালাক’ দিয়ে ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ। রোশেনারা স্পষ্টভাবে জানান, তাঁর স্বামী শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তাঁকে তালাক দেন এবং এরপরই বাংলাদেশি নাগরিক হাবিবাকে বিয়ে করেন।
আরও বিস্ময়কর বিষয় হল, হাবিবা খাতুনের সমস্ত ভারতীয় পরিচয়পত্র — আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি — জিয়ারুল শেখ নিজেই তৈরি করিয়ে দেন। অভিযোগ, তিনি তাঁর আত্মীয় শমসুর শেখকে হাবিবার বাবার পরিচয়ে ব্যবহার করেন। ফলে সরকারি নথিতে হাবিবার বাবা হিসেবে শমসুর শেখের নাম ওঠে।
এই অনুপ্রবেশ ও জালিয়াতির ঘটনা একসময় গ্রামে চাউর হয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরিস্থিতি জটিল হতে দেখে হাবিবা খাতুন, যিনি বর্তমানে হাবিবা শেখ নামে পরিচিত, পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান। স্থানীয় সূত্রে খবর, তিনি এখন বাংলাদেশেই রয়েছেন এবং সেখানেই নিরাপদে বসবাস করছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, নলহাটি থানার পুলিশ এই ঘটনাটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা রুজু হয়েছে কি না, সে বিষয়ে অফিসিয়ালভাবে কিছু জানা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “এই ধরনের ঘটনা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে বিয়ে করে সেনাবাহিনীর জওয়ান যদি নথি বানিয়ে দেন, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে ভাবাই যায় না।”
জিয়ারুলের প্রথম স্ত্রী রোশেনারার বক্তব্য, “আমি ওর সঙ্গে অনেকদিন সংসার করেছি। ও আমাকে ছেড়ে দিল শুধুমাত্র আরেকজনকে বিয়ে করার জন্য, যার ভারতীয় কোনো পরিচয়ই ছিল না। এখন যখন ঘটনা ফাঁস হয়েছে, সেই মেয়েটা পালিয়ে গেছে।”
নলহাটি থানা এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী কীভাবে এত সহজে আধার, ভোটার কার্ড, এমনকি প্যান কার্ড পর্যন্ত পেয়ে গেলেন? কারা সাহায্য করল, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে গোটা ঘটনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে হাবিবার ভারতীয় নথিপত্র কোথা থেকে ও কীভাবে তৈরি করা হল, সেটাই তদন্তের মূল ফোকাস। পাশাপাশি সেনা জওয়ান জিয়ারুল শেখের ভূমিকা এবং তাঁর কোনো প্রভাব খাটানো হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
Jiyarul Sheikh’s first wife Roshenara Khatun alleged that to marry Habiba, Jiyarul Sheikh gave her ‘triple talaq’. Jiyarul Sheikh procured all the documents of Bangladeshi Habiba using his money and influence.
(Image: Jiyarul Sheikh’s first wife Roshenara Khatun) pic.twitter.com/zlcTHF57ZQ— Hindu Voice (@HinduVoice_in) July 25, 2025
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের গল্প নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে জাতীয় নিরাপত্তা, নাগরিকত্বের অবৈধ ব্যবহার এবং দেশের আইন ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। রাজনৈতিক মহল থেকেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে।
বীরভূমের গ্রামীণ এলাকায় যেভাবে একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এত সহজে ভারতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে গিয়েছেন, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞরা। প্রশাসনের প্রতি দাবি উঠেছে, শুধু হাবিবা নয়, এরকম অন্য অনুপ্রবেশকারীদের খোঁজেও বিশেষ অভিযান চালানো হোক।
শেষ পর্যন্ত এই ঘটনা কিসে গিয়ে দাঁড়ায়, পুলিশি তদন্ত কতদূর যায়, এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসে, সেদিকেই এখন নজর সকলের। তবে এমন ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতি ও রাজনৈতিক দায়দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।