২০২০ সালের ডিসেম্বর। রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। সামনে একুশের বিধানসভা ভোট। এমন সময়। বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা ও দক্ষ সংগঠক শুভেন্দু অধিকারী ( Suvendu Adhikari)। শুরু থেকেই তাঁর নিশানায় ‘ভাইপো’ অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Nephew Controversy)। এখন সুর চড়ালেও এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। সেটা ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও আগে।
মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এখন কেবল খাতায় কলমে তিনি তৃণমূলের বিধায়ক। দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও জানিয়েছেন। তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র ক্ষোভ। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা-অভিষেকের বিরুদ্ধে সুর নরম। নতুন দল গড়ার পর হুমায়ুন কবীরের অবস্থান নিয়ে কৌতুহল থাকছেই।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে বরাবর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। নাম না করে ‘ভাইপো’ বলে সম্বোধন করেছেন। প্রথমবার হুমায়ুন কবীরের তৃণমূল ছাড়ার পিছনেও এই ‘ভাইপো’ বিতর্ক ছিল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাইপোকে রাজা করতে চান”। এই মন্তব্যের জন্য তৃণমূল নেতৃত্বের বিষ নজরে পড়েন হুমায়ুন কবীর। সাসপেন্ড হতে হয়।
কেন এমন মন্তব্য করেছিলেন হুমায়ুন কবীর? কী এমন হয়েছিল? এর পিছনে লম্বা ইতিহাস। ২০১১ সালে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের বিধায়ক হন হুমায়ুন। প্রথমবার ভোটে জিতেই জয়। তখন কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট। হুমায়ুন কবীর জিতেছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে।
২০১২ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ভেঙে যায়। কংগ্রেসের পাঁচ মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। সেই সময় তৃণমূলের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের দুই বিধায়ককে মন্ত্রিত্বের টোপ দেওয়া হয় বলে শোনা যায়। একজন ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। আরেকজন রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর। তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হন হুমায়ুন।
এরপর শুরু হয় অন্য খেলা। মন্ত্রিত্বের স্বাদ বেশিদিন পাননি হুমায়ুন কবীর। সংবিধান অনুযায়ী তাঁকে মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে জিততে হত। সেটাও আবার মন্ত্রী হিসেবে শপথের ছয় মাসের মধ্যে। দুই কংগ্রেস বিধায়কের ছেড়ে যাওয়া আসনে উপনির্বাচন হয়। ইংরেজবাজারে কৃষ্ণেন্দু জিতলেও রেজিনগরে হেরে যান ঘাসফুলের প্রার্থী হুমায়ুন কবীর।
মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়। বিধায়ক পদ তো আগেই ছেড়েছিলেন। তৃণমূলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন হুমায়ুন কবীর। অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভইপোকে রাজা করতে চান”। এই ধরনের দলবিরোধী কাজের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করেন রেজিনগর কেন্দ্র থেকে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন তৃতীয় স্থানে। এরপর তৃণমূলে ফেরা খুব কঠিন হয়ে পড়ে হুমায়ুন কবীরের কাছে। ফের তিনি কংগ্রেসের হাত ধরেন। তখন আবারও তিনি অধীরের অনুগামী। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের হয়ে ময়দানে ছিলেন। সেই বছরেই বিজেপির পতাকা ধরেন হুমায়ুন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের পদ্ম প্রার্থী। জিততে পারেননি। ২০২১ সালের ভোটের আগে ফের তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক।
দলবদলু হুমায়ুন কবীর কখনই তৃণমূলের সংগঠনে গুরুত্ব পাননি। সেই জায়গা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দল ছাড়েন। বিজেপিতে যোগ দেন। নতুন দল গড়েননি। হুমায়ুন কবীর শুভেন্দুর পথে হাঁটছেন না। তিনি আর কোনও দলের ছত্রছায়ায় থাকতে চাইছেন না। সাম্প্রতিক অতীতে ‘ভাইপো’ তথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি হুমায়ুন কবীর। ছাব্বিশের আগে কি তিনি শুভেন্দুর স্টাইলে খেলবেন? সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।