যখন দেশে নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে,(Aparajita Bill) তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০২৪ সালে রাজ্য সরকার ‘অপরাজিতা বিল’ পেশ করেছে, যা নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও খুনের মতো জঘন্য অপরাধের(Aparajita Bill) শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করেছে। এই বিলটির উদ্দেশ্য ছিল, ধর্ষণ ও খুনের মতো অপরাধের শাস্তি আরও কঠোর করা, যাতে এই ধরনের অপরাধীরা ভয়ে অপরাধ করতে না পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন কেন্দ্র সরকার এই বিলের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে? কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন একটি পদক্ষেপকে কেন্দ্র সরকারের দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হচ্ছে(Aparajita Bill)
আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের পর অপরাজিতা বিলের প্রয়োজনীয়তা
এটি মনে রাখা উচিত যে, অপরাজিতা বিলটি পশ্চিমবঙ্গে নারীর(Aparajita Bill) নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা ঘটনা থেকে উদ্ভূত। আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনা সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার এক ভীতিকর চিত্র তুলে ধরে। তাছাড়া, কসবা আইন কলেজের ছাত্রীর ধর্ষণ, ওড়িশার নির্যাতিতা তরুণীর আত্মদাহ—এসব ঘটনায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ স্তম্ভিত। এর ফলে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে।(Aparajita Bill) এমন এক সময়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলটি পেশ করেন, যেখানে সোজা শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছরের পরিবর্তে আজীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে(Aparajita Bill)
কেন্দ্রের আপত্তি: কোথায় দ্বিচারিতা?
এত সোজা বিলটি রাজ্য সরকার পাঠালে কেন্দ্র কেন আপত্তি তুলবে? সূত্রের খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, অর্থাৎ অমিত শাহের নেতৃত্বে, বিলটির কিছু প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে আপত্তি তুলেছে। বিশেষ করে, মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত ধারার উপর প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই আপত্তি কেন্দ্রের দ্বিচারিতারই চিহ্ন। যেখানে একদিকে প্রধানমন্ত্রী ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন, অন্যদিকে তাঁর সরকার এমন একটি বিলকে অস্বীকার করছে যা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। যদি নারীর নিরাপত্তা এবং তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হয়ে থাকে, তবে কেন কেন্দ্র সরকার এই ধরনের বিলের বিরোধিতা করছে?(Aparajita Bill)
এটি একটি গভীর প্রশ্ন যা সাধারণ জনগণের মনে উঠছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষত ধর্ষণ ও খুনের মতো অপরাধের ঘটনা যখন দেশজুড়ে বেড়েই চলেছে, তখন একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন কঠোর শাস্তির প্রস্তাব দিয়ে আইন পেশ করেন, তখন তা কেবল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু কেন্দ্র কেন এই পদক্ষেপে আপত্তি জানাচ্ছে? এটি কি রাজনৈতিক কারণে? নাকি কোনো গভীর সামাজিক বা সাংবিধানিক কারণ রয়েছে(Aparajita Bill)
রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত: বিরোধিতা বাড়ছে
বিলটি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের কাছে পাঠানোর পর, সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রাজ্যপাল এই বিলটিকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য না পাঠিয়ে, সংশোধনী নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একটি রাজ্যের সরকারের আইনগত প্রয়াস, যা নারীর অধিকার রক্ষা ও সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য তৈরি, তার জন্য কেন এমন প্রতিবন্ধকতা? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকার রাজ্যের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন, যা জাতীয় আঙ্গিকে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারত। এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের আপত্তি কী উদ্দেশ্যে?
এটাই কি নারীর প্রতি রাজনীতি?
আজকের দিনে, যখন দেশের প্রতিটি প্রান্তে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার কাজ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। জনগণ কি এ ধরনের দ্বিচারিতা মেনে নেবে? বিশেষত যখন প্রধানমন্ত্রী নারীর নিরাপত্তা ও তাদের শিক্ষা নিয়ে বারবার কথা বলছেন, তখন সরকারের এক অংশ কেন এভাবে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়?
এতে একটাই প্রশ্ন ওঠে: কেন্দ্র সরকার কি সত্যিই নারীর সুরক্ষায় আন্তরিক? তাদের কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে যা জনগণের কল্যাণের থেকে উপরের?
এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে হবে, যারা অপরাজিতা বিল পেশ করে এই সংকটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কেন্দ্রকে মনে রাখতে হবে যে, একটি জাতীয় উদ্যোগ হতে পারে নারীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সেটি রাজ্য থেকেই শুরু হবে।