ডিআরডিও’র নতুন অস্ত্রে আরও শক্তিশালী ভারতীয় সেনা

ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি (Indian Army)।  প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) আন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে অবস্থিত ন্যাশনাল ওপেন এরিয়া রেঞ্জ (এনওএআর) পরীক্ষা কেন্দ্রে ইউএভি-চালিত…

Indian Army new missile

ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি (Indian Army)।  প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) আন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে অবস্থিত ন্যাশনাল ওপেন এরিয়া রেঞ্জ (এনওএআর) পরীক্ষা কেন্দ্রে ইউএভি-চালিত প্রিসিশন গাইডেড মিসাইল (ULPGM-V3)-এর ফ্লাইট পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই সাফল্যের জন্য ডিআরডিও এবং শিল্প অংশীদারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক বড় উন্নতি হিসেবে, ডিআরডিও কুর্নুলের এনওএআর পরীক্ষা কেন্দ্রে ULPGM-V3-এর ফ্লাইট পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

   

ডিআরডিও, ডিফেন্স ক্যাপিটাল প্রকিউরমেন্ট পার্টনার্স (DcPPs), এমএসএমই এবং স্টার্ট-আপদের এই সাফল্যের জন্য অভিনন্দন। এই সাফল্য প্রমাণ করে যে ভারতীয় শিল্প এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি শোষণ এবং উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত।”

ULPGM-V3-এর বৈশিষ্ট্য

ULPGM-V3 হলো ডিআরডিও-র তৈরি একটি উন্নত ইউএভি-চালিত প্রিসিশন গাইডেড মিসাইল, যা আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের চাহিদা পূরণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ULM-ER (এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ) নামেও পরিচিত, যা ULPGM পরিবারের একটি উন্নত সংস্করণ। এই মিসাইলটি হালকা ওজনের, অত্যন্ত নির্ভুল এবং বিভিন্ন এরিয়াল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত নমনীয়তা প্রদান করে।

এটি ইমেজিং ইনফ্রারেড (IIR) সিকার এবং ডুয়াল-থ্রাস্ট প্রপালশন সিস্টেমের মতো উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে সজ্জিত। এই মিসাইলটি দিন ও রাত উভয় সময়ে কাজ করতে সক্ষম এবং এর সর্বোচ্চ পরিসর দিনে ৪ কিলোমিটার এবং রাতে ২.৫ কিলোমিটার। এটি একটি ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট মিসাইল, যার ওজন ১২.৫ কেজি এবং এটি বিভিন্ন ধরনের স্থির ও চলমান টার্গেট ধ্বংস করতে সক্ষম।

পরীক্ষার বিবরণ

এই পরীক্ষা কুর্নুলের এনওএআর পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিচালিত হয়েছে, যা ডিআরডিও-র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পরীক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই পরীক্ষা কেন্দ্রটি সম্প্রতি হাই-এনার্জি লেজার-ভিত্তিক ডিরেক্টেড এনার্জি ওয়েপনস (DEWs) এবং সোয়ার্ম ড্রোন নিরপেক্ষ করার সিস্টেম পরীক্ষার জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। ULPGM-V3-এর পরীক্ষায় ডিআরডিও একটি হেক্সাকপ্টার ইউএভি ব্যবহার করেছে, যা এই মিসাইলের লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে। এই পরীক্ষা ভারতের ড্রোন-ভিত্তিক নির্ভুল আঘাত সক্ষমতার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ।

শিল্পের অংশগ্রহণ এবং আত্মনির্ভর ভারত

এই সাফল্য ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ডিআরডিও-র পাশাপাশি অদানি ডিফেন্স এবং ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (BDL) এই প্রকল্পের প্রধান উৎপাদন অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও, বিভিন্ন এমএসএমই এবং স্টার্ট-আপ এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

Advertisements

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “এই সাফল্য প্রমাণ করে যে ভারতীয় শিল্প এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত।” ULPGM-V3-এর সমস্ত উপাদান, যেমন গাইডেন্স সিস্টেম, প্রপালশন এবং ওয়ারহেড মেকানিজম, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, যা ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার দিকে আরেকটি পদক্ষেপ।

প্রযুক্তিগত উন্নতি

ULPGM-V3 হলো ULPGM পরিবারের তৃতীয় সংস্করণ, যার পূর্বসূরী ULPGM-V1 এবং ULPGM-V2 ডিআরডিও’র টার্মিনাল ব্যালিস্টিক্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি (TBRL) দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। এই সংস্করণে একাধিক ওয়ারহেড কনফিগারেশন এবং উন্নত সিকার প্রযুক্তি রয়েছে। এটি ট্যাঙ্কের মতো বিস্ফোরক রিঅ্যাকটিভ আর্মার (ERA) ধ্বংস করতে সক্ষম ট্যান্ডেম ওয়ারহেড দিয়ে সজ্জিত।

এছাড়া, এর লেজার-গাইডেড প্রিসিশন এবং টপ-অ্যাটাক মোড এটিকে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে একটি কার্যকর অস্ত্র করে তুলেছে। এই মিসাইলটি TAPAS-BH এবং Archer-NG-এর মতো ইউএভি প্ল্যাটফর্মের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে কাছাকাছি যুদ্ধক্ষেত্রে নির্ভুল আঘাতের সক্ষমতা প্রদান করে।

ULPGM-V3-এর সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উৎপাদন ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এটি ভারতের ড্রোন-ভিত্তিক নির্ভুল আঘাত সক্ষমতার উন্নতি এবং দেশীয় প্রযুক্তির উপর নির্ভরতার প্রমাণ। ডিআরডিও এবং শিল্প অংশীদারদের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা ভারতকে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও সক্ষম করে তুলছে।

বিদ্বেষের বাংলাদেশে যাওয়ার ছক, ‘সাম্প্রদায়িক’ হুমায়ুনের!

কুর্নুলের এনওএআর পরীক্ষা কেন্দ্র এই ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পরীক্ষার জন্য ভারতের ক্রমবর্ধমান অবকাঠামোর প্রতীক। এই সাফল্য ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার পথে আরেকটি পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করবে।