পঞ্চম দিনেও হট্টগোল, সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিলেন ওম বিড়লা

সংসদের বাদল অধিবেশনের পঞ্চম দিনেও লোকসভা ও রাজ্যসভায় তীব্র হট্টগোল হচ্ছে (Om Birla)। বিরোধী দলগুলির অব্যাহত প্রতিবাদ এবং স্লোগানের কারণে উভয় কক্ষের কার্যক্রম বারবার বন্ধ…

Om Birla calls for all party meet

সংসদের বাদল অধিবেশনের পঞ্চম দিনেও লোকসভা ও রাজ্যসভায় তীব্র হট্টগোল হচ্ছে (Om Birla)। বিরোধী দলগুলির অব্যাহত প্রতিবাদ এবং স্লোগানের কারণে উভয় কক্ষের কার্যক্রম বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা পার্লামেন্টের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।

বিরোধী দলগুলি বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর), পহেলগাঁও হামলা, অপারেশন সিঁদুর এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তান শান্তি মধ্যস্থতার দাবি নিয়ে আলোচনার দাবিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এই বিষয়গুলির উপর আলোচনার জন্য বিরোধী সাংসদরা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন এবং কক্ষের মধ্যে স্লোগান দিচ্ছেন, যা পার্লামেন্টের কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।

   

পঞ্চম দিনের ঘটনাপ্রবাহ

বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদের কারণে বারবার অধিবেশন স্থগিত করা হচ্ছে। ২৫ জুলাই, শুক্রবার সকালে লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই বিরোধী সাংসদরা বিহারে এসআইআর এবং পহেলগাঁও হামলার বিষয়ে আলোচনার দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

স্পিকার ওম বিড়লা বারবার সাংসদদের তাদের আসনে ফিরে যাওয়ার এবং কক্ষের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “এই কক্ষ আলোচনা এবং সংলাপের জন্য, স্লোগান দেওয়ার জন্য নয়। জনগণ আপনাদের আচরণ দেখছে।

আমি সকলকে অনুরোধ করছি কক্ষের মর্যাদা বজায় রাখুন।” তবে, বিরোধীদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকায় সকাল ১১টায় শুরু হওয়া অধিবেশন মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। দুপুরে পুনরায় অধিবেশন শুরু হলেও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে, এবং অবশেষে লোকসভার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

রাজ্যসভাতেও একই রকম পরিস্থিতি দেখা গেছে। বিরোধী সাংসদরা বিহারের এসআইআর এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার দাবিতে কক্ষের মধ্যে প্রতিবাদ করেন। রাজ্যসভার সভাপতি প্রতিবাদী সাংসদদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় উপরের কক্ষটিও দিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক

এই অব্যাহত ব্যাঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার ওম বিড়লা একটি সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। এই বৈঠকে সরকার এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে পার্লামেন্টের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। সংসদীয় কার্যমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন, সরকার সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

তবে এটি পার্লামেন্টের নিয়ম ও প্রথা মেনে হতে হবে। তিনি বলেন, “কক্ষের মধ্যে হট্টগোলের মাধ্যমে আলোচনা সম্ভব নয়। আমরা সকল বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার জন্য প্রস্তুত।” বৈঠকে বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতারা, সহ কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি এবং সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisements

বিরোধীদের দাবি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া

বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি এবং ডিএমকে, বিহারে ভোটার তালিকার এসআইআর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কংগ্রেস সাংসদ মানিকাম ট্যাগোর অভিযোগ করেছেন যে এই প্রক্রিয়া দলিত, পশ্চাদপদ জাতি এবং গরিব সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার হরণ করার জন্য একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

তিনি বলেন, “এই এসআইআর প্রক্রিয়া ঔপনিবেশিক যুগের কৌশলের স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন শুধুমাত্র সম্পত্তির মালিকরা ভোট দিতে পারতেন।” এছাড়া, বিরোধীরা পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য দাবি করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং সংসদীয় কার্যমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বারবার বলেছেন যে সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে, তারা বিরোধীদের কক্ষের মর্যাদা বজায় রাখতে এবং নিয়ম মেনে আলোচনায় অংশ নিতে বলেছেন। বিজেপি সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব অভিযোগ করেছেন, “কংগ্রেস নেতারা হট্টগোল সৃষ্টি করছেন এবং পরে দাবি করছেন যে তাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।”

বজ্রপাতে রাজ্যে মৃত্যু ১৭ জনের, পূর্ব বর্ধমানেই প্রাণ হারালেন পাঁচ কৃষক

সংসদের মর্যাদা নিয়ে উদ্বেগ

স্পিকার ওম বিড়লা বারবার সাংসদদের পার্লামেন্টের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “দেশ জনগণের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে গঠনমূলক আলোচনা আশা করে। প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন এবং স্লোগান দেওয়া সংসদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

তিনি আরও বলেন যে এই ধরনের আচরণ “রাস্তার মতো” এবং পার্লামেন্টের মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাউতও বিরোধীদের আচরণের সমালোচনা করে বলেন, “প্রতিটি অধিবেশনে ব্যাঘাত ঘটানো হচ্ছে। পুরো দেশ এই আচরণ দেখছে।”

পার্লামেন্টের মনসুন অধিবেশনের পঞ্চম দিনে ব্যাঘাত এবং হট্টগোলের কারণে কোনও উল্লেখযোগ্য আইনি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। স্পিকার ওম বিড়লার সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক এই সংকট সমাধানের একটি প্রচেষ্টা। তবে, সরকার এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমঝোতার অভাব এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিতর্কিত মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এই বৈঠকের ফলাফল পার্লামেন্টের বাকি অধিবেশনের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে, এবং দেশ এখন গঠনমূলক আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছে।