কেরালার কান্নুর সেন্ট্রাল জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া ২০১১ সালের সৌম্যা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার (Rape Accused)দোষী সাব্যস্ত গোবিন্দচামী, যিনি চার্লি থমাস নামেও পরিচিত, শুক্রবার সকাল ১০:৪০ নাগাদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এই ঘটনা কেরালার জেল নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করেছে এবং রাজ্যজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গোবিন্দচামী, যিনি ২৩ বছর বয়সী সৌম্যাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন, তিনি শুক্রবার ভোররাত ১:১৫ নাগাদ জেল থেকে পালিয়ে যান। তবে, পুলিশের তৎপরতা এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
পটভূমি
২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, কোচি থেকে শোরানুরগামী একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে সৌম্যা নামে ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে নৃশংসভাবে আক্রমণ করে গোবিন্দচামী। তিনি কোচির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। গোবিন্দচামী, তামিলনাড়ুর বিরুধাচলমের বাসিন্দা এবং একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, ট্রেনের সাধারণ কামরায় উঠে সৌম্যাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।
এরপর তিনি তাকে ধর্ষণ করেন এবং মারাত্মকভাবে আহত করেন। সৌম্যা ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে ত্রিশুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনা কেরালা তথা সারা ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল এবং নারী নিরাপত্তার বিষয়ে বড় ধরনের আলোচনার সূত্রপাত করেছিল।
গোবিন্দচামী, যিনি তামিলনাড়ুতে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাকে ২০১১ সালে কেরালা পুলিশ গ্রেফতার করে। ২০১২ সালে ত্রিশুর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে কেরালা হাইকোর্ট এই রায় বহাল রাখে।
তবে, ২০১৬ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হত্যার অভিযোগ থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং ধর্ষণের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল যে হত্যার অভিযোগ প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
জেল থেকে পালানোর বিবরণ
কান্নুর সেন্ট্রাল জেল, যা কেরালার সবচেয়ে সুরক্ষিত কারাগারগুলির মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত, সেখান থেকে গোবিন্দচামীর পালানোর ঘটনা জেল নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোবিন্দচামী জেলের উচ্চ-নিরাপত্তা ব্লকের চতুর্থ সেলে একা বন্দী ছিলেন।
তিনি জেলের লোহার শিক কেটে, কয়েদিদের পোশাক দিয়ে তৈরি একটি দড়ি ব্যবহার করে ২৫ ফুট উঁচু দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে যে তিনি বাইরে থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন। ঘটনার সময় জেলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বলেও জানা গেছে, যা পালানোর কাজকে আরও সহজ করে দেয়।
জেল কর্মকর্তারা ভোর ৫টায় নিয়মিত পরিদর্শনের সময় তার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করেন এবং সকাল ৭টায় কান্নুর টাউন পুলিশকে জানানো হয়। এরপর পুলিশ তৎক্ষণাৎ রাজ্যব্যাপী তল্লাশি অভিযান শুরু করে। কে-৯ স্কোয়াড এবং রেলওয়ে স্টেশন ও বাস ডিপোতে নজরদারি বাড়ানো হয়।
গ্রেপ্তারের বিবরণ
শুক্রবার সকাল ১০:৪০ নাগাদ কান্নুরের থালাপ্পু এলাকায় একটি পরিত্যক্ত প্লটে পুলিশ গোবিন্দচামীকে গ্রেফতার করে। স্থানীয় এক বাসিন্দা, যিনি পুলিশের সঙ্গে তল্লাশিতে অংশ নিয়েছিলেন, জানান যে গোবিন্দচামী একটি কুয়োর মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে সতর্ক জনগণের সময়োচিত সহায়তা পুলিশের কাজকে সহজ করে দেয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে কান্নুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।জনগণ ও রাজনৈতিক
প্রতিক্রিয়া
গোবিন্দচামীর পালানোর ঘটনা কেরালার জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সৌম্যার মা এই ঘটনায় গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এত উচ্চ-নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে? এটা স্পষ্ট যে তিনি কারও সাহায্য পেয়েছেন।” ২০১১ সালে গোবিন্দচামীকে গ্রেপ্তারকারী পুলিশ কর্মকর্তা আশরফ বলেন, তিনি সবসময় আশঙ্কা করেছিলেন যে এই আদত অপরাধী জেল থেকে পালাতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলিও এই ঘটনায় সরকার ও পুলিশের সমালোচনা করেছে। প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি কে. সুরেন্দ্রন অভিযোগ করেন যে এই পালানোর পিছনে একটি বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে এবং গোবিন্দচামীকে পালাতে সাহায্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, “কান্নুর জেলে সিপিআই(এম)-এর শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি রয়েছে। এই ঘটনা সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ।”
আরসিবি তারকার বিরুদ্ধে নাবালিকার উপর যৌ*ন নির্যাতনের অভিযোগ
জেল নিরাপত্তার প্রশ্ন
এই ঘটনা কেরালার জেল ব্যবস্থার নিরাপত্তার দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। রাজ্য পুলিশ প্রধান রেবাড়া চন্দ্রশেখর এই ঘটনার তদন্তের তদারকি করছেন। জেলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গোবিন্দচামীর গ্রেপ্তার স্বস্তি এনেছে, তবে এই ঘটনা নারী নিরাপত্তা এবং জেল ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।