বৃহস্পতিবার লন্ডনে ঐতিহাসিক ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরিত হল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মোদী জানান, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, এই চুক্তি ভারতের টেক্সটাইল, রত্ন ও অলংকার শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে গুরুত্বপূর্ণভাবে উপকৃত করবে। একইসঙ্গে ভারতীয়রা এখন থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিমান শিল্পের যন্ত্রাংশ আরও সাশ্রয়ী মূল্যে পেতে পারবেন। বহু বছরের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ স্বাক্ষরিত এই চুক্তি শুধুমাত্র একটি আর্থিক সমঝোতা নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া সমৃদ্ধির এক নীলনকশা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই চুক্তির পাশাপাশি, আমরা দ্বিগুণ অবদান কনভেনশনের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছেছি। এটি উভয় দেশের পরিষেবা খাতে, বিশেষ করে প্রযুক্তি এবং অর্থায়নে নতুন শক্তি সঞ্চার করবে। এটি ব্যবসা করার সহজতাকে উৎসাহিত করবে, ব্যবসা করার খরচ কমাবে এবং ব্যবসা করার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ভারতের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ থেকে উপকৃত হবে। এই বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশে বিনিয়োগ বাড়াবে এবং বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। চুক্তিটি দুটি বৃহৎ গণতন্ত্র এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির মূল চালকদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়ায়, এটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আগামী দশকে আমাদের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন গতি এবং শক্তি প্রদানের জন্য, আজ আমরা ভিশন ২০৩৫ চালু করছি। ভিশন ২০৩৫ হল একটি রোডম্যাপ যা প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু, শিক্ষা এবং জনগণের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী, বিশ্বাসযোগ্য এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী অংশীদারিত্বের ভিত্তি তৈরি করবে।”
এদিন যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, বাণিজ্য চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি করবে — যা ২০৪০ সালের চুক্তির অনুপস্থিতিতে বাণিজ্যের স্তরের তুলনায় বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের সমান (বর্তমানে বার্ষিক ২১ বিলিয়ন ডলার)।
এফটিএ-র প্রতিরক্ষা শিল্প রোডম্যাপ তৈরি করা নিয়ে মোদী জানান, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের জন্য একটি প্রতিরক্ষা শিল্প রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে এবং প্রযুক্তি সুরক্ষা উদ্যোগকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ অব্যাহত থাকবে।
তাঁর কথায়, “এআই থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তা, আমরা একসাথে ভবিষ্যৎ তৈরি করব, এটা আমাদের অঙ্গীকার। শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা একসাথে একটি নতুন অধ্যায় লিখছি। যুক্তরাজ্যের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে ক্যাম্পাস খুলছে। গত সপ্তাহেই, সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় গুরুগ্রাম শহরে তাদের ক্যাম্পাস উদ্বোধন করেছে।”
তিনি আরোও বলেন, “আমরা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, ইউক্রেনে চলমান সংঘাত এবং পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছি। আমরা শান্তি ও স্থিতিশীলতার দ্রুত পুনরুদ্ধারকে সমর্থন করি। সকল দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা অপরিহার্য। আজকের যুগ উন্নয়নের দাবি করে, সম্প্রসারণবাদের নয়।”
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যের এই চুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি যুক্তরাজ্য এবং ভারতের উন্নত পরিষেবা খাতের মধ্যে একীকরণের সূচনা করে। এই চুক্তির ফলে ভারতের বাজার আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে উচ্চমানের ব্রিটিশ গাড়ি ও হুইস্কির জন্য। তবে পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়িত হবে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রায় ৯৯ শতাংশ ট্যারিফ লাইনের উপর শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রায় ১০০ শতাংশ মূল্যকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে পণ্যের ব্যাপক বাজার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয়েছে এবং ভারতের রপ্তানি স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে।