নয়াদিল্লি: দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ উপ-রাষ্ট্রপতির আসন এখন শূন্য। মাত্র ক’দিন আগেই, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আমি ২০২৭-এর অগস্টেই অবসর নেব, ঈশ্বর না চাইলে তার আগে নয়।” সেই মন্তব্যের ১২ দিনের মাথায় আচমকাই ইস্তফা দেন জগদীপ ধনখড়। যদিও স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়েছেন তিনি, তবে রাজনৈতিক মহলে এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি।
সংবিধান অনুযায়ী, উপ-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব আয়োজন করতে হবে। এখনও পর্যন্ত নির্বাচন ঘোষণা হয়নি ঠিকই, তবে দিল্লির করিডরে জোর গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে, কে হবেন ধনখড়ের উত্তরসূরি? (Jagdeep Dhankhar successor speculation)
জল্পনার কেন্দ্রে যাঁরা
নীতীশ কুমার
অবাক করার মতো হলেও, একাধিক মহলে জোর গুঞ্জন চলছে যে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার হঠাৎ করেই জাতীয় স্তরের ভূমিকায় চলে যেতে পারেন। এনডিএ-র শরিক উপেন্দ্র কুশওয়াহাও এর আগে দাবি করেছেন, নীতীশের এখন অবসর নেওয়া উচিত এবং পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতিতে, উপ-রাষ্ট্রপতির পদ হতে পারে তাঁর জন্য ‘সম্মানজনক অবসর’-এর রাস্তাও। এদিকে চিরাগ পাসোয়ান ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, তিনি বিহার নির্বাচনে লড়বেন, ফলে রাজনৈতিক অঙ্কে অনেক কিছুই সম্ভব।
ভিকে সাক্সেনা (৬৭)
তিন বছর ধরে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে রয়েছেন। যদিও সেই সময়টুকুতে দিল্লির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তিনি হয়ে উঠেছেন একটি বিতর্কিত মুখ। ‘সংবিধানগত প্রশাসনিক বাধা’ হিসাবে আম আদমি পার্টির একাধিক নীতির রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ। দিল্লি জল বোর্ড থেকে শুরু করে একাধিক নীতি রূপায়ণে ভিকে সাক্সেনা ছিলেন কঠিন প্রতিপক্ষ। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, তাঁকে ‘বড় দায়িত্বে’ নিয়ে আসা হতে পারে, এবার সেই সম্ভাবনা আরও দৃঢ় হচ্ছে।
মনোজ সিন্হা (৬৬)
জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিন্হার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬ অগস্ট। তাই সময়ের দিক থেকে তিনিই সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী বলে ধরা হচ্ছে। একদা রেল প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, এবং উত্তরপ্রদেশের প্রবীণ বিজেপি নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয়। ৩৭০ ধারা রদের পরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলেই মনে করেন সমর্থকেরা। যদিও শেষদিকে পাহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলায় পর্যটকদের প্রাণহানির ঘটনার দায় তাঁর কাঁধেই পড়েছে।
নতুন অঙ্ক, নতুন ভারসাম্য
উপ-রাষ্ট্রপতি শুধু সংসদের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যানই নন, বরং সাংবিধানিক কাঠামোয় তাঁর অবস্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যিনি এই পদে বসবেন, তাঁর মাধ্যমেই সংসদে সরকারের কৌশলগত ভারসাম্য, প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক বার্তা আরও স্পষ্ট হবে।
এখন দেখার, মোদি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে কাকে আনা হয়। নির্বাচনের ঘোষণা কখন হবে এবং বিজেপির কৌশলে শেষ পর্যন্ত কোন নাম উঠে আসে-সেই দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।