ভারতীয় কৃষকদের জন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (Kisan Credit Card) স্কিম একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তা প্রকল্প, যা কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপের জন্য সহজে ঋণ প্রদান করে। ২০২৫ সালে এই স্কিমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে, যা কৃষকদের জন্য আরও সুবিধাজনক এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, KCC-এর ঋণের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে, যা দেশের ৭.৭ কোটি কৃষকদের উপকার করবে। এছাড়া, ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য কোনো গ্যারান্টার বা জামানতের প্রয়োজন নেই, যা কৃষকদের জন্য ঋণ গ্রহণকে আরও সহজ করেছে।
KCC স্কিমের নতুন নিয়ম ও সুবিধা (২০২৫)
১. ঋণের সীমা বৃদ্ধি: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সংশোধিত ব্যাজ ছাড় প্রকল্প (Modified Interest Subvention Scheme – MISS) অনুমোদিত হয়েছে। এর আওতায় KCC ঋণের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটি কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং পোস্ট-হারভেস্ট খরচের জন্য বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
২. গ্যারান্টার ছাড়া ঋণ: ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য কোনো জামানত বা গ্যারান্টারের প্রয়োজন নেই। এর জন্য শুধুমাত্র ফসলের হাইপোথিকেশন (Hypothecation of Crops) যথেষ্ট। তবে, ৩ লাখ টাকার উপরে ঋণের জন্য জমি বা অন্যান্য সম্পত্তির মর্টগেজ প্রয়োজন হতে পারে।
৩. সুদের হার ও ছাড়: ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য সুদের হার বার্ষিক ৭% নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে সরকার ব্যাজ ছাড় প্রদান করে। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করলে ৩% অতিরিক্ত ছাড় (Prompt Repayment Incentive) পাওয়া যায়, ফলে কার্যকর সুদের হার কমে ৪%-এ নেমে আসে। তবে, এই ছাড় পেতে আধার বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
৪. ঋণের ধরন ও পরিশোধ: KCC একটি রিভলভিং ক্যাশ ক্রেডিট অ্যাকাউন্ট হিসেবে কাজ করে, যেখানে কৃষকরা প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলতে পারেন। ফসলের ফলন ও বিপণন সময়ের উপর ভিত্তি করে পরিশোধের সময় নির্ধারিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিশোধের সময়সীমা পুনর্নির্ধারণ করা যায়।
৫. যোগ্যতা ও নথিপত্র: কৃষক, ভাড়াটে চাষি, শেয়ার ক্রপার, স্বনির্ভর গোষ্ঠী (SHG) এবং যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠী (JLG) এই স্কিমের জন্য যোগ্য। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে আধার কার্ড, ভোটার আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো পরিচয়পত্র, জমির মালিকানার প্রমাণ, এবং ফসলের ধরন ও জমির পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য।
৬. অন্যান্য সুবিধা: KCC ধারকদের জন্য রূপে ডেবিট কার্ড, ফসল বীমা (PMFBY), এবং ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা (PAIS) সুবিধা রয়েছে। এছাড়া, ১০% বার্ষিক ঋণের সীমা বৃদ্ধি এবং ৩ বছর পর্যন্ত বিনা মূল্যায়নের বৈধতা প্রদান করা হয়।
কীভাবে আবেদন করবেন?
কৃষকরা নিকটবর্তী ব্যাঙ্ক শাখায় গিয়ে বা অনলাইনে KCC-এর জন্য আবেদন করতে পারেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI), ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি এই স্কিমে অংশগ্রহণ করে। আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করে পরিচয় ও জমির নথিপত্র জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার পর ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাঙ্ক যোগাযোগ করে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই স্কিম?
KCC স্কিম কৃষকদের আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান করে এবং মধ্যস্থতাকারীদের উপর নির্ভরতা কমায়। বর্ধিত ঋণের সীমা এবং গ্যারান্টার ছাড়া ঋণের সুবিধা কৃষকদের কৃষি উৎপাদন, পশুপালন, মৎস্য চাষ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সহায়তা করবে। এই স্কিম ২০২৫-২৬ মরসুমে কৃষকদের জন্য একটি বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে।