রাজনাথের ঘরে দফায় দফায় বৈঠক, সাদা কাগজে সই? ধনখড়ের ইস্তফা ঘিরে ঘনীভূত রহস্য

নয়াদিল্লি: উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনখড়। সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় ‘স্বাস্থ্যের অবনতি’র কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি (Jagdeep Dhankhar sudden…

রাজনাথের ঘরে দফায় দফায় বৈঠক, সাদা কাগজে সই? ধনখড়ের ইস্তফা ঘিরে ঘনীভূত রহস্য

নয়াদিল্লি: উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনখড়। সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় ‘স্বাস্থ্যের অবনতি’র কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি (Jagdeep Dhankhar sudden resignation)। কিন্তু এই পদক্ষেপ যতটা ‘ব্যক্তিগত’, তার রাজনৈতিক প্রতিধ্বনি ততটাই গভীর। সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই এমন চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে হতবাক বিরোধীপক্ষ থেকে শুরু করে শাসক দলের একাংশও।

আসল কারণ স্বাস্থ্য না রাজনীতি?

সরকারি বিবৃতিতে স্বাস্থ্যের কারণ উঠে এলেও, একাধিক ঘটনা আর সময়ের সামঞ্জস্যে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয় ধনখড়ের। তখন তিনি ছিলেন পরিবারের সঙ্গে এবং জানান পরদিন ফের কথা বলবেন। এর কিছু ক্ষণ আগেই, বিকেল ৫টার মধ্যে ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেন প্রমোদ তিওয়ারি, জয়রাম রমেশ ও অখিলেশ প্রসাদ সিং। তাঁদের দাবি, তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য স্বাভাবিকই মনে হয়েছে এবং তিনি ইস্তফার কোনও আভাস দেননি। বরং বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

   

‘সাদা কাগজে সই’? রাজনাথের দফতরে কী হয়েছিল?

ঘটনার আর একটি স্তর তৈরি হয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের অফিস ঘিরে। সন্ধ্যায় সেখানে দফায় দফায় বৈঠক হয়। সূত্রের দাবি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি সাংসদ বলেন, “সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল।” এই বক্তব্য নিয়েও রাজনৈতিক শোরগোল তুঙ্গে। তবে ওই বৈঠকে ধনখড় উপস্থিত ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

সূত্রের আরও দাবি, ইস্তফার আগে ধনখড় বেশ কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে একটি ঘরোয়া বৈঠক করেন, যা চলে প্রায় ২০-২৫ মিনিট ধরে।

বিরোধীদের ইমপিচমেন্ট নোটিশের সঙ্গে কোনও যোগ?

ঘটনার সময়রেখা অনুযায়ী, সোমবার দুপুর ২টার পর লোকসভার প্রায় ১০০ জন বিরোধী সাংসদ বিচারপতি বিরেণ্দ্র কুমার ভার্মার ইমপিচমেন্টের জন্য সই করেন। এরপর বিকেল ৪টা ৭ মিনিটে ধনখড় জানান, ৬৩ জন সাংসদের স্বাক্ষর সহ নোটিশ জমা পড়েছে। তিনি সেটি গ্রহণ করেন এবং সবাইকে প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানান। তারপর সন্ধ্যায় তিনি একাধিক বিরোধী সাংসদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Advertisements

কিন্তু তার ঠিক ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই, সন্ধ্যা ৭টা ৫০ নাগাদ ইস্তফা দেন তিনি। অথচ সারাদিনের কার্যকলাপে কিংবা আচরণে এমন কোনও ইঙ্গিত দেননি তিনি। এমনকি অধিবেশন চলাকালীনও শারীরিক অসুস্থতার কোনও ছাপ ছিল না।

বড়সড় রাজনৈতিক পালাবদলের ইঙ্গিত?

সব কিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, এ কি নিছকই স্বাস্থ্যঘটিত সিদ্ধান্ত? না কি কোনও বড় রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনা? ধনখড় নিজে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে। বিশেষ করে বিচারপতি ইমপিচমেন্টের মতো গুরুতর সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকাকালীন এমন ইস্তফা নিছক কাকতালীয় নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।

বিশ্লেষকদের মতে, সামনে ২০২৬ সালের আগে রাজ্যসভার পূর্ণ গঠন, আইন ও বিচারব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তারে বহু কৌশলগত বিষয় নির্ধারিত হবে। এমন মুহূর্তে ধনখড়ের সরে দাঁড়ানো শুধু ‘অসুস্থতা’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন।