নয়াদিল্লি: চিনা সেনার নজর এড়িয়ে সরাসরি দৌলত বেগ ওল্ডি (DBO) পৌঁছনোর জন্য তৈরি হচ্ছে ভারতের নতুন কৌশলগত রাস্তা। ১৩০ কিমি দীর্ঘ এই বিকল্প রুটটি শুধু দ্রুত যোগাযোগই নয়, সেনা মুভমেন্ট ও রসদ সরবরাহে ভারতকে দেবে বিশাল কৌশলগত সুবিধা। সব কিছু ঠিক থাকলে, ২০২৬-এর মধ্যেই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (BRO) (India DBO Strategic Road)।
এক ঝটকায় ২ দিনের রাস্তা এখন ১২ ঘণ্টার
লাদাখের সাসোমা থেকে সাসের লা, সাসের ব্রাংসা, গাপশন হয়ে ডিবিও পর্যন্ত তৈরি হওয়া এই নতুন রুটটি পুরনো দারবুক-শ্যোক-ডিবিও (DSDBO) রুটের তুলনায় ৭৯ কিমি কম। ফলে লেহ্ থেকে ডিবিও পৌঁছতে যেখানে আগে সময় লাগত ৪৮ ঘণ্টা, সেখানে এই রুটে পৌঁছনো যাবে মাত্র ১১-১২ ঘণ্টায়।
চিনের নজরদারির বাইরে ভারতীয় সেনা মুভমেন্ট
পুরনো রুটের একটা বড় সমস্যা ছিল, চিনা সেনার পর্যবেক্ষণ থেকে তাকে পুরোপুরি গোপন রাখা যেত না। নতুন রুটটি সে সমস্যার সমাধান করবে। এই রাস্তা ভারতীয় সেনার দ্রুত মুভমেন্ট, আর্টিলারি ট্রান্সপোর্ট এবং লজিস্টিক সাপোর্টে বড় সুবিধা দেবে, তাও শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়ে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ এয়ারস্ট্রিপের আরও কাছাকাছি ভারত
ডিবিও-তে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ এয়ারস্ট্রিপ (১৬,৬১৪ ফুট)। এখান থেকে হাতেগোনা কিলোমিটার দূরে কারাকোরাম পাস ও বিতর্কিত ডেপসাং প্লেইনস, যেখানে চিন বহুবার ভারতের দাবি চ্যালেঞ্জ করেছে। ফলে এই নতুন রুট ভারতের সীমান্ত প্রতিরক্ষা কৌশলে বড় পরিবর্তন আনবে।
BRO-এর সাহসিকতা ও প্রযুক্তির জয়
১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় সীমিত অক্সিজেন, তুষারঝড়, বরফে ঢাকা রাস্তা—সব কিছুকে জয় করে চলছে নির্মাণ। বছরে মাত্র ৫-৬ মাস কাজ করার সুযোগ। কর্মীদের স্বাস্থ্য ও দক্ষতা বজায় রাখতে BRO তৈরি করেছে ‘অক্সিজেন ক্যাফে’, যাতে কাজের ফাঁকে অক্সিজেন নিতে পারেন শ্রমিকরা।
সেতু পেরোবে বোফোর্স কামানও
রুটে থাকা ৯টি সেতুর ওজন বহন ক্ষমতা বাড়িয়ে ৭০ টনে উন্নীত করা হয়েছে। বোফোর্স কামান ও অন্য ভারী যুদ্ধ সরঞ্জাম পরীক্ষামূলকভাবে পার করানো হয়েছে সফলভাবে।
৮ কিমির টানেলের পরিকল্পনা, লক্ষ্য অল-ওয়েদার কানেকশন
১৭,৬৬০ ফুট উচ্চতায় সাসের লা-তে পরিকল্পনা চলছে একটি ৮ কিমির দীর্ঘ টানেল তৈরির, যা শেষ হলে শীতকালেও ডিবিও পৌঁছনো সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে সারাবছর কার্যকর থাকবে এই কৌশলগত রুট।
৫০০ কোটির প্রকল্প, দুই ফ্রন্টে প্রস্তুতি ভারতের
এই পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। লাদাখ ও সিয়াচেন সংলগ্ন এলাকাগুলিতে একাধিক রুট ও সড়ক তৈরির পাশাপাশি নতুন টানেল এবং সেতু তৈরি করে ভারত এখন দুই ফ্রন্টে—পশ্চিমে পাকিস্তান এবং পূর্বে চিন, দুটো দিকেই প্রতিরক্ষা দৃঢ় করছে।