একুশে জুলাই—এই দিনটি দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যালেন্ডারে এক আবেগঘন ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল প্রতিবছর ধর্মতলায় শহিদ দিবস পালন করে থাকে। ১৯৯৩ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া কংগ্রেস কর্মীদের স্মরণে এই দিনটি তৃণমূল তাদের রাজনীতির অনন্য অস্ত্রে পরিণত করেছে। কিন্তু ২০২৫ সালের একুশে জুলাইয়ে ঘটল এক ভিন্ন চিত্র—এই প্রথম, তৃণমূলের শহিদ দিবসের দিনই বিজেপি পাল্টা শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভার আয়োজন করল। আর এই আয়োজনের প্রধান মুখ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দীর্ঘদিন ধরে দিলীপ ঘোষ বলে আসছিলেন, ‘‘একুশে জুলাই আমি চমক দেব।’’, সেই চমক কী হতে চলেছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছিল। অনেকে ভেবেছিলেন তিনি তৃণমূলের দিকে পা বাড়াবেন কি না, দলবদল করবেন কি না, সে নিয়েও গুঞ্জন কম ছিল না। কিন্তু সব জল্পনার মধ্যেই একুশের দিন বিজেপির তরফে পাল্টা শহিদ সম্মান সভার আয়োজন করেই সেই জল্পনাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন তিনি।
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি একুশে জুলাই শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা করছে—এটা কি চমক নয়? তৃণমূল তো এতদিন এই দিনটায় নিজেদের একটা বাৎসরিক অনুষ্ঠান করে আসছে। ডিম ভাতের প্রোগ্রাম চলে। আমরা মনে করি, শহিদ তো আমাদের হয়েছে। যে শহিদদের নিয়ে এত নাটক, তারা তো কংগ্রেসের। তৃণমূলের সঙ্গে ওদের কী সম্পর্ক?’’
এই মন্তব্য ঘিরেই তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। তৃণমূলের তরফে এখনও পর্যন্ত দিলীপ ঘোষের এই পদক্ষেপ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, শাসক দলের অন্দরমহলে বিষয়টি যে নজরে এসেছে তা বলাই যায়। বিজেপির এই উদ্যোগ যে একুশে জুলাইয়ের প্রথাগত ছকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও একমত।
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার আজ যেভাবে বাংলায় জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে, আমরা তাতে বিশ্বাস করি না। শহিদরা কোনও দলের হতে পারে না। যে আন্দোলনের শহিদরা হয়েছিল, তারা তো কংগ্রেসের হয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। তখন তো তৃণমূল জন্মায়নি। তাহলে তৃণমূল কীভাবে এই শহিদদের আপন করে নিচ্ছে?’’
তিনি আরও জানান, বিজেপি নিজের মতো করে শহিদদের সম্মান জানাতে চায়, এবং সেটাই এই বছরের একুশে জুলাইয়ের বার্তা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিজেপির তরফে একটি কৌশলগত চাল, যার মাধ্যমে তৃণমূলের একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি, দিলীপ ঘোষের এই নেতৃত্বে থাকা আয়োজন যে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে নতুন করে তুলে ধরছে, সে বিষয়েও সন্দেহ নেই।
তবে, সব কিছুর মধ্যেই প্রশ্ন থেকে যায়—এটি কি নিছকই একটি প্রতীকী রাজনৈতিক জবাব, না কি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে বৃহত্তর কৌশল? দিলীপ ঘোষের অতীত বক্তব্য, বিতর্কিত মন্তব্য, এবং সাংগঠনিক রূপরেখায় তাঁর অবস্থান মিলিয়ে এই প্রশ্ন এখন উঠে আসছে বিজেপির অন্দরেও।
তবে এই ঘটনা প্রমাণ করে দিলীপ ঘোষ এখনও বঙ্গ রাজনীতির ‘চমক’ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি একদিকে যেমন দলীয় ভাবনায় অনড়, তেমনি অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রথা ভাঙার সাহস রাখেন—এই দুই মিশ্রণই তাঁকে এখনও আলোচনার কেন্দ্রে রাখছে।