বহু প্রতীক্ষিত নতুন আয়কর বিল ২০২৫ (Income Tax Bill 2025) নিয়ে গঠিত সংসদীয় নির্বাচিত কমিটির রিপোর্ট সোমবার লোকসভায় পেশ হতে চলেছে। এই রিপোর্টের মাধ্যমে ভারতের প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার একটি মৌলিক সংস্কারের পথ প্রশস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
৩১ সদস্যের এই সংসদীয় নির্বাচিত কমিটি, যার সভাপতিত্ব করছেন বিজেপি সাংসদ বিজয়ন্ত পাণ্ডা (Baijayant Panda), লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার নির্দেশে গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির কাজ ছিল প্রস্তাবিত আইনের খসড়া পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের সুপারিশ প্রদান করা।
কমিটি ১৬ জুলাই তাদের শেষ বৈঠকে রিপোর্টটি গৃহীত করেছে। পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, রিপোর্টটিতে মোট ২৮৫টি সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো নতুন আইনটিকে আরও কার্যকর, বোধগম্য ও প্রয়োগযোগ্য করে তোলা।
পুরনো আইনের পরিবর্তে আধুনিক, সরল এবং কমপ্যাক্ট আইন:
প্রস্তাবিত আয়কর আইনটি ১৯৬১ সালের আয়কর আইনকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করবে। নতুন আইনের খসড়াটি আইনি ভাষার সরলতা, অধ্যায়ের সংখ্যা হ্রাস এবং ব্যাখ্যামূলক অনুচ্ছেদের ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে একটি সহজতর কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করছে।
নতুন খসড়া আইনে মোট শব্দসংখ্যা কমিয়ে ২.৬ লক্ষ করা হয়েছে, যেখানে বর্তমান আইনে তা ৫.১২ লক্ষ। একইসঙ্গে অধ্যায়ের সংখ্যা ৪৭ থেকে কমিয়ে ২৩ করা হয়েছে এবং ধারা সংখ্যা ৮১৯ থেকে কমিয়ে ৫৩৬ করা হয়েছে।
করবর্ষেই আয়কর, ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব:
নতুন আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’ (Assessment Year)-এর ধারণা সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়া। এর পরিবর্তে ‘ট্যাক্স ইয়ার’-এর ভিত্তিতে আয়কর ধার্য করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, যেই বছর আয় হবে, সেই বছরেই কর প্রদান করতে হবে। আগে যেমন ২০২৩–২৪ সালের আয়ের ওপর কর ধার্য হতো ২০২৪–২৫ সালে, নতুন ব্যবস্থায় সেটি বাতিল করা হচ্ছে।
সহজতর ভাষা, টেবিল-ভিত্তিক কাঠামো:
নতুন আইনে কর ছাড় (exemptions) ও উৎসে কর কর্তন (TDS/TCS)-এর ধারা গুলিকে টেবিল আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে সাধারণ করদাতারাও সহজেই বুঝতে পারেন। বিদ্যমান আইনে যেখানে ১২০০টি প্রোভাইসো ও ৯০০টি ব্যাখ্যামূলক ক্লজ ছিল, সেগুলির অধিকাংশই এই নতুন আইনে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই আইনে মোট ৫৭টি টেবিল রয়েছে, যেখানে বর্তমান আইনে মাত্র ১৮টি টেবিল ছিল। এটি করব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও সরল করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।
এনজিও ও অলাভজনক সংস্থাগুলির জন্য আলাদা পরিসর:
নতুন খসড়া আইনে অলাভজনক সংস্থাগুলির (Not-for-Profit Organisations) নিয়ন্ত্রণ ও কর কাঠামোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এখানেও ভাষাকে সহজ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হয়েছে, যাতে ছোট এনজিও গুলি বা সমাজসেবামূলক সংস্থাগুলিও স্পষ্টভাবে নিয়ম বুঝতে পারে।
বিতর্ক ও আলোচনার অপেক্ষায়:
আর্থিক মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই বিলটি লোকসভায় প্রথমবার পেশ করেছিলেন। বিল পেশের সময় তিনি বলেছিলেন, “এই আইনের খসড়ায় বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। শব্দসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে, ধারা সংখ্যা ৮১৯ থেকে ২৩৬-এ নামানো হয়েছে।”
মন্তব্য পর্বের সময় মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন যে এই আইনের উদ্দেশ্য হলো কর ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ করা, করদাতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দূর করা এবং মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা কমিয়ে আনা।
বর্ষাকালীন অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ:
২০২৫ সালের বর্ষাকালীন অধিবেশন ২১ জুলাই থেকে শুরু হবে এবং চলবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত। এই অধিবেশনেই সংসদে কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হবে এবং তারপর বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন পাস হলে ভারতের করব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটবে। এটি করদাতার জন্য যেমন সুবিধাজনক হবে, তেমনি সরকারকেও কর আদায় ও পরিদর্শন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
নতুন আইনের কার্যকর হওয়ার তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি, তবে আশা করা হচ্ছে এটি ২০২৬-২৭ করবর্ষ থেকে প্রয়োগে আসবে।