ইসলামপুরের নাম পরিবর্তন করে ঈশ্বরপুর করার ঘোষণা রাজ্য সরকারের

মহারাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি সাংলি জেলার ইসলামপুর (Islampur) শহরের নাম পরিবর্তন করে ঈশ্বরপুর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাটি রাজ্যের বিধানসভায় বর্ষাকালীন অধিবেশনের শেষ…

Islampur name change

মহারাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি সাংলি জেলার ইসলামপুর (Islampur) শহরের নাম পরিবর্তন করে ঈশ্বরপুর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাটি রাজ্যের বিধানসভায় বর্ষাকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে, ১৮ জুলাই, ২০২৫-এ করা হয়েছে। খাদ্য ও নাগরিক সরবরাহ মন্ত্রী ছগন ভুজবল জানিয়েছেন যে এই সিদ্ধান্তটি বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত হয়েছে।

সিদ্ধান্ত এখন কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এই পদক্ষেপটি দীর্ঘদিনের একটি স্থানীয় দাবির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে, যা প্রধানত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শিব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে সম্বাজি ভিদে উত্থাপিত হয়েছিল।

   

ইসলামপুর, শহর টি সাংলি জেলার ওয়ালওয়া তহসিলে অবস্থিত। ১৯৮৬ সাল থেকে এই শহরের নাম পরিবর্তনের দাবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিব প্রতিষ্ঠান নামক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সাংলি কালেক্টরেটে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে এই নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল। সংগঠনের সমর্থকরা জানিয়েছেন যে তারা এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রচারণা থেকে পিছু হটবে না।

মহারাষ্ট্রের খাদ্য ও নাগরিক সরবরাহ মন্ত্রী ছগন ভুজবল বিধানসভায় বলেছেন, “শহর ও গ্রামের নাম পরিবর্তনের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে এবং প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসের নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি সরকার এই সিদ্ধান্তকে “স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি” হিসেবে বর্ণনা করেছে। ফড়নবিস জানিয়েছেন, “ইসলামপুরের মূল এবং ঐতিহাসিক নাম ছিল ঈশ্বরপুর। এটি জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, এবং ক্ষমতাসীন সরকার হিসেবে আমরা এটি বাস্তবায়ন করেছি।” তবে, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শরদচন্দ্র পাওয়ার) এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস বিধায়ক আসলাম শেখ এই পদক্ষেপকে “জনগণকে বোকা বানানোর প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “ইসলামপুরের নাম পরিবর্তন করে ঈশ্বরপুর করুন, সবকিছু করুন, কিন্তু শহরের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা যেমন পানীয় জল, রাস্তাঘাট, উদ্যান এবং খেলার মাঠের উন্নতির দিকে মনোযোগ দিন।

মানুষ জীবনযাত্রা ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে কতদিন জনগণকে বোকা বানাবেন?” শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা আম্বাদাস দানবে এই সিদ্ধান্তকে “জাতপাত ও সংঘাত সৃষ্টির প্রয়াস” হিসেবে সমালোচনা করেছেন। এনসিপি (এসসিপি) নেতা জয়ন্ত পাটিল দাবি করেছেন যে এই নাম পরিবর্তনের দাবি কেবলমাত্র কিছু সংখ্যক লোকের ছিল, স্থানীয় জনগণের সামগ্রিক ইচ্ছার প্রতিফলন নয়।

Advertisements

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছেন যে এটি ভারতের “সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের” অংশ। তিনি বলেছেন, “অনেক স্থান, ইতিহাসের বই এবং ঘটনা ইচ্ছাকৃতভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন এগুলি পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে, এবং ভারত একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”

মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নিতেশ রানে আরও বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেছেন, “ভারত একটি হিন্দু রাষ্ট্র, তাই ইসলামপুরের মতো নাম এখানে মানানসই নয়।” এই মন্তব্যগুলি বিরোধীদের কাছ থেকে আরও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, যারা এটিকে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

এই নাম পরিবর্তন মহারাষ্ট্রের চলমান নামকরণ অভিযানের একটি অংশ। এর আগে, ২০২২ সালে রাজ্য সরকার অরঙ্গাবাদের নাম পরিবর্তন করে ছত্রপতি সম্ভাজিনগর এবং ওসমানাবাদের নাম পরিবর্তন করে ধারাশিব করেছিল, যা পরে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পেয়েছিল। অহমেদনগরের নাম পরিবর্তন করে অহিল্যানগর করার প্রস্তাবও বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।

শিক্ষকের হেনস্থায় আত্মহত্যা! উত্তাল শারদা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রেফতার ২

এই সিদ্ধান্ত সাংলি জেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও সরকার এটিকে ঐতিহাসিক পরিচয় পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করছে, বিরোধীরা এটিকে জনগণের মৌলিক সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরানোর কৌশল হিসেবে দেখছে। এই বিতর্কের ফলে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।