নিজস্ব সংবাদদাতা, কোচবিহার: শহীদ দিবস উপলক্ষে ২১ জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা শহীদ সমাবেশে যোগ দিতে সকালে ঘোকসাডাঙ্গা স্টেশন থেকে ট্রেনে রওনা দেন তৃণমূল কর্মীরা (TMC-BJP)। সেই সময়ই ঘটে রাজনৈতিক উত্তেজনামূলক এক ঘটনা, যার জেরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
তৃণমূল কর্মীদের ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিলেন মাথাভাঙ্গা ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব, যার মধ্যে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাবলু বর্মন, কোচবিহার জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি স্বপন বর্মন, ও রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কমলেশ অধিকারী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঠিক দুপুর ১:১৫ নাগাদ, মাথাভাঙ্গার বিজেপি বিধায়ক সুশীল বর্মন ঘোকসাডাঙ্গা স্টেশনে উপস্থিত হন টিকিট কাটার উদ্দেশ্যে এবং তাঁর গাড়িতেই ছিলেন। তাঁকে দেখেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তৃণমূল নেতৃত্ব ও কর্মীরা বিধায়কের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। অভিযোগ, তাঁরা প্রশ্ন তোলেন – “চার বছরে কোন কাজ করেননি কেন?”, “এনআরসি’র নামে কোচবিহারের বাসিন্দাদের নোটিস পাঠানো হয়েছে কেন?”
এই বিক্ষোভের মাঝে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিধায়ক গাড়ি ঘুরিয়ে এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তৃণমূল কর্মীরা তাঁর গাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ আরও তীব্র করে তোলেন। অভিযোগ, সেই সময় বিধায়কের ব্যক্তিগত সহকারী এক তৃণমূল কর্মীকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেলে, তৃণমূল কর্মীরা সেই সহকারীর উপর চড়াও হন। সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এরপর বিধায়ক এলাকা ছাড়তে গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, সেই সময় কিছু উত্তেজিত তৃণমূল কর্মী তাঁর গাড়ির উপর হামলা চালান। গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। এই ঘটনায় প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিজেপি সূত্রে জানানো হয়, বিধায়ক সুশীল বর্মনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তাঁর সহকারীর উপর হামলা হয়েছে।
ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ তোলে, বিধায়কের রক্ষীরা তৃণমূল কর্মীদের উপর হাত তুলেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সাবলু বর্মন, স্বপন বর্মন, কমলেশ অধিকারীর নেতৃত্বে বহু তৃণমূল কর্মী ঘোকসাডাঙ্গা থানার সামনে ধরনা ও বিক্ষোভে সামিল হন। তাঁরা দাবি তোলেন, “কেন বিধায়কের গাড়ি থেকে একজন তৃণমূল কর্মীকে ধাক্কা দেওয়া হল? কেন পুলিশ এখনো বিধায়কের সহকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?”
ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ফের রাজনৈতিক সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ২১ জুলাইকে ঘিরে উত্তেজনা থাকলেও, এই ধরনের ঘটনায় তা আরও বেড়ে গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
স্থানীয় মানুষ ও রেলযাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে এমন হিংসাত্মক পরিস্থিতি কি বারবার রাজ্যবাসীকে দেখতে হবে?