২১শে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের সভা সামনে (Howrah) রেখে হাওড়ার শিবপুরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বুধবার হাওড়ার ফোরশোর রোড এবং জগৎ ব্যানার্জি রোডের ধারে বাতিস্তম্ভে লাগানো বেশ কিছু হোর্ডিং ছেঁড়ার ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর মধ্যে ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। (Howrah) তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, হোর্ডিংগুলোকে ব্লেড দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘটনার পিছনে বিজেপি ও সিপিএমের হাত থাকতে পারে। অভিযোগের তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে, তৃণমূল এই ঘটনায় শিবপুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছে(Howrah)
তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, ওই হোর্ডিংগুলোতে প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ছিল। তবে, যেখানে মন্ত্রী অরূপ রায়ের নাম ছিল, সেই হোর্ডিংগুলো অক্ষত রয়েছে। ফলে, একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল হতে পারে। বিশেষ করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল থেকে বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর তিনি আবার ফিরে আসেন, যা দলের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে।
হাওড়া সদর তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ রায় সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই অভিযোগ করেছেন যে, ‘‘এটা সিপিএম এবং বিজেপির ষড়যন্ত্র। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের ভোট বিজেপির ঝুলিতে চলে গিয়েছিল। এখন তারা একে অপরকে সাহায্য করছে। পুলিশকে বলেছি, সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে গোটা ঘটনার তদন্ত করা হোক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দলে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। যারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অন্যদিকে, প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া পোস্টার ছিঁড়ে কার সাহস হতে পারে? পুলিশকে বলেছি, কড়া ব্যবস্থা নিন।’’ রাজীবের ভাষ্য অনুযায়ী, তার নাম দেওয়া হোর্ডিংগুলি ছিঁড়ে দেওয়ার ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল হতে পারে।
তবে, সিপিএম এবং বিজেপির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে। সিপিএমের হাওড়া জেলার সম্পাদক দিলীপ ঘোষ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা কখনো পোস্টার ছেঁড়া, ফ্লেক্স কাটা কিংবা এমন কাজ করিনি। আমাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো কাজ হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না।’’ বিজেপি’র রাজ্য সম্পাদক উমেশ রায় বলেন, ‘‘বিরোধীরা কেন পোস্টার ছিঁড়বে? এটা পুরোপুরি তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ফল। এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর হোর্ডিং ছিঁড়ে ফেলেছে।’’
এমন একটি রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে হাওড়ার শিবপুরের ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, তৃণমূলের অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এই ধরনের ঘটনা কি প্রকট হয়ে উঠছে? এমন কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে, যেখানে শাসক দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। দলের মধ্যে এমন বিভাজন কি ২১শে জুলাইয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ সভার প্রস্তুতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?
এই উত্তেজনার মধ্যে, হাওড়ায় পুলিশি তদন্তও শুরু হয়েছে। শিবপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার ফলে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে। যদিও তৃণমূল নেতারা অভিযোগ করলেও, বিজেপি এবং সিপিএম তাদের নিন্দা জানিয়েছেন।
অতএব, হাওড়ার শিবপুরে ঘটে যাওয়া এই হোর্ডিং ছেঁড়া ঘটনা শুধু একটি স্থানীয় সমস্যার সীমায় নয়, বরং এটি রাজ্যের রাজনীতির একটি বড় অঙ্গ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ২১শে জুলাইয়ের সভা এবং এর সমর্থনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারণা এবার নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে, যেখানে দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হবে।