ডিজিটাল ইন্ডিয়া (Digital India) প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের (MeitY) তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া ডিজিলকার (DigiLocker) এখন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সরকারি এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটির মূল লক্ষ্য হল নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ নথি সহজে, সুরক্ষিতভাবে এবং কাগজবিহীন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও শেয়ার করার সুযোগ করে দেওয়া।
বর্তমান সময়ে ভোটার আইডি, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সনদ বা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নথি— এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ঘরে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। হারিয়ে যাওয়া, চুরি হয়ে যাওয়া বা ক্ষতির আশঙ্কা সবসময় থেকেই যায়। এই সমস্যার সমাধান হিসাবে সরকারের পক্ষ থেকে এসেছে ডিজিলকার।
ডিজিলকার হল একটি ক্লাউড-ভিত্তিক (cloud-based) প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রতিটি নাগরিক তাদের আধার নম্বরের মাধ্যমে ১ জিবি পর্যন্ত ডেডিকেটেড স্টোরেজ স্পেস পান। এখানে ডিজিটাল ফরম্যাটে নথি সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে সহজে অ্যাক্সেস ও শেয়ার করা সম্ভব।
আইনগত বৈধতা এবং সুবিধা:
ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০ অনুযায়ী, ডিজিলকারে সঞ্চিত নথিগুলি মূল কাগজের সমতুল্য হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ, এগুলি আইনগতভাবে পূর্ণ স্বীকৃত এবং যে কোনো অফিসিয়াল যাচাই প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায়। এর ফলে সরকার কাগজবিহীন প্রশাসন এবং সহজ যাচাই প্রক্রিয়া চালু করতে পেরেছে।
ডিজিলকার ব্যবহার করলে নাগরিকরা তাদের নথি মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই দেখতে ও দেখাতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন অফিস বা ইন্সটিটিউটে বারবার ফিজিক্যাল কপি নিয়ে যেতে হবে না।
ডিজিলকারে কোন কোন নথি রাখা যায়?
ডিজিলকারে নানান ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নথি রাখা যায়। যেমন— আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, একাডেমিক মার্কশিট ও ডিগ্রি, আয় শংসাপত্র, বীমা নথি, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট (যথাযথ ফরম্যাটে), বিদ্যুৎ বা অন্যান্য ইউটিলিটি বিল, ব্যাংক বা আর্থিক নথি।
এছাড়াও, যে কোনো প্রাইভেট বা পার্সোনাল নথির স্ক্যান করা কপি বা PDF ফাইলও ডিজিলকারে আপলোড করে রাখা যায়। ফলে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সেগুলি সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব।
ডিজিলকার অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপ-ধাপে নির্দেশনা:
১. প্রথমে, মোবাইলে DigiLocker অ্যাপটি ডাউনলোড করুন বা সরকারি ওয়েবসাইট (https://www.digilocker.gov.in) এ যান।
২. এরপর, আপনার আধার নম্বর ব্যবহার করে সাইন আপ করুন এবং OTP দিয়ে ভেরিফাই করুন।
৩. সাইন আপ সম্পূর্ণ হলে, আধার কার্ডের সাথে লিঙ্ক করুন।
৪. ‘Issued Documents’ সেকশনে গিয়ে সরাসরি সরকারি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে ইস্যু করা নথি টেনে নিতে পারবেন।
৫. ‘Uploaded Documents’ ট্যাবে নিজের স্ক্যান করা নথি আপলোড করে সেভ করতে পারবেন।
ডিজিলকারের মাধ্যমে আপনি আপনার নথি ইমেলের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন অথবা একটি সিকিউর শেয়ারিং লিঙ্ক জেনারেট করতে পারেন, যা প্রাপকরা সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করতে পারবেন।
কেন ডিজিলকার?
ডিজিলকারের মাধ্যমে দেশব্যাপী কাগজবিহীন প্রশাসন এবং ই-গভর্ন্যান্স আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। নাগরিকদের জন্য এটি শুধু সময় বাঁচায় না, বরং নথি ব্যবস্থাপনাকে সহজ ও সুরক্ষিত করে তোলে।
কোনো কলেজে ভর্তি হওয়া, নতুন চাকরিতে যোগদান, ব্যাংক লোন আবেদন, বা গাড়ির রিনিউয়াল— সব ক্ষেত্রেই ডিজিলকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিলকার ব্যবহার বাড়ালে নথি সংরক্ষণ ও যাচাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতি আসবে। এর ফলে ভারত সরকারের ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’ স্লোগান আরও সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে।
এখন পর্যন্ত কোটি কোটি ভারতীয় নাগরিক ডিজিলকারে সাইন আপ করেছেন এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ নথি নিরাপদে সঞ্চয় করছেন। ভবিষ্যতে এই ডিজিটাল উদ্যোগ আরও জনপ্রিয় ও কার্যকর হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।