দুর্গাপুরে মোদীর সভায় থাকছেন না দিলীপ ঘোষ, জল্পনা তুঙ্গে

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি। সেই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে বিরাট জনসভায় অংশ নিতে…

Dilip Ghosh Visits Delhi BJP Headquarters, Discusses Preparations for 2026 West Bengal Elections"

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি। সেই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে বিরাট জনসভায় অংশ নিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সভাটি বিজেপির পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেখানে দেখা যাবে না দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় নেতা দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh)। খবর নিশ্চিত হওয়ায় বিজেপির অন্দরের বিভাজন ফের সামনে এলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

সোমবার থেকেই জল্পনা ছিল, দিলীপ ঘোষ সভায় যাবেন কি না। প্রথমে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দিলীপ ঘোষের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং তিনিও দুর্গাপুরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, দিলীপ ১৭ জুলাই রাতেই দুর্গাপুরে পৌঁছে যাবেন বলে পরিকল্পনা ছিল।

   

কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন, তিনি দুর্গাপুরের সভায় যাচ্ছেন না। কলকাতাতেই থাকছেন তিনি। এমনকি সভায় উপস্থিত কর্মীদের মাঝেও দেখা যাবে না তাঁকে। দিলীপ বলেন, “মেদিনীপুর জোনে সভা হলে যেতাম। পার্টিকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই না।” ঘনিষ্ঠ মহলে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

তবে কয়েকদিন আগেই দিলীপ ঘোষ নিজেই বলেছিলেন, “আমন্ত্রণপত্র সবার জন্য হয় না। কর্মীরা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, কর্মীদের মাঝেই থাকব।” এমন অবস্থায় তাঁর সিদ্ধান্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। তবে এটুকু স্পষ্ট, বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ সংঘাত এখন আর চাপা থাকছে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষকে দুর্গাপুর আসনে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। সেই সময় কীর্তি আজাদের সঙ্গে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন দিলীপ, যদিও শেষমেশ পরাজিত হন তিনি। এই আসন থেকে প্রার্থী করা নিয়ে দলে বহু বিতর্ক হয়, কারণ দিলীপের চেনা গড় মেদিনীপুর ছেড়ে তাঁকে দুর্গাপুরে দাঁড় করানো নিয়ে অন্দরমহলে অসন্তোষ ছিল প্রবল।

Advertisements

এই ঘটনা ফের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বিজেপির ভেতরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও সমন্বয়হীনতা। দিলীপ ঘোষের মতো একজন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে এমন গুরুত্বপূর্ণ জনসভায় অংশ নিতে না দেখা দলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও দলীয় নেতৃত্ব এখনো এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। রাজ্য বিজেপির নেতাদের কেউই দিলীপের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অনুপস্থিতি নিছক ‘ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত’ নয়, বরং রাজ্য বিজেপির অন্দরের ফাটলের প্রকাশ্য রূপ।

দলের অভ্যন্তরে নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা ঘিরে অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি যে ক্রমশ বেড়েই চলেছে, তা আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। দিলীপ ঘোষের মতো হেভিওয়েট নেতার এমন সিদ্ধান্ত বাংলায় বিজেপির সংগঠন ও নির্বাচনী প্রস্তুতির উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।

এখন দেখার, ১৮ জুলাইয়ের সভার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই অনুপস্থিতিকে কীভাবে দেখেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়। তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা—দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কি তবে অন্দরের ‘অস্বস্তি’র সুরে সুর মিলিয়েই দিলীপ ঘোষকে ধীরে ধীরে প্রান্তে সরিয়ে দিচ্ছেন?