নিউটাউন আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধনেও কেন্দ্রকে নিশানা মমতার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) আজ কলকাতার নিউ টাউনে ‘নিজন্ন’ এবং ‘সুজন্ন’ আবাসন প্রকল্পের একটি জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি একই সঙ্গে বহুতল…

Mamata attacks central government

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) আজ কলকাতার নিউ টাউনে ‘নিজন্ন’ এবং ‘সুজন্ন’ আবাসন প্রকল্পের একটি জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি একই সঙ্গে বহুতল পার্কিং কমপ্লেক্স ‘সুসম্পন্ন’ এবং বিনোদন ও অনুষ্ঠানের জন্য নতুন কেন্দ্র ‘তরণ্য’-এরও উদ্বোধন করেছেন।

এই প্রকল্পগুলি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উন্নয়নমূলক উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা নিউ টাউনকে একটি আধুনিক এবং স্মার্ট শহরে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে রাজ্য সরকারের ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন, যা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (পিএমএওয়াই) থেকে তহবিল না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হয়েছিল।

   

‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ আবাসন প্রকল্পের বিস্তারিত

‘নিজন্ন’ এবং ‘সুজন্ন’ আবাসন প্রকল্পগুলি পশ্চিমবঙ্গ হাউজিং বোর্ডের অধীনে নিউ টাউনে নির্মিত হয়েছে, যার লক্ষ্য সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ মানুষের জন্য আধুনিক আবাসন সুবিধা প্রদান করা। এই প্রকল্পগুলি বিশেষভাবে নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত আয়ের পরিবারগুলির (ইডব্লিউএস এবং এলআইজি) জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, “আমরা চাই প্রত্যেকের মাথার উপর একটি ছাদ থাকুক। ‘নিজন্ন’ এবং ‘সুজন্ন’ প্রকল্পগুলি আমাদের সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একটি পদক্ষেপ।” তিনি জানান, এই প্রকল্পগুলিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যেমন জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সবুজ পরিবেশ রয়েছে, যা বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।

‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের প্রেক্ষাপট

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “গত তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে একটি পয়সাও দেয়নি। আমরা গরিব মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তাই আমরা নিজেদের উদ্যোগে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প চালু করেছি।”

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার ১২ লক্ষ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে, যার মধ্যে প্রতিটি পরিবারকে ঘর নির্মাণের জন্য ১.২ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলমহল এবং দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের কিছু এলাকায় এই পরিমাণ ১.৩ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরও ১৬ লক্ষ পরিবারকে এই সুবিধা দেওয়া হবে।

‘সুসম্পন্ন’ ও ‘তরণ্য’ প্রকল্প

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বহুতল পার্কিং কমপ্লেক্স ‘সুসম্পন্ন’-এর উদ্বোধন করেন, যা নিউ টাউনের ক্রমবর্ধমান যানজট সমস্যার সমাধান করবে। এই পার্কিং কমপ্লেক্সে আধুনিক সুবিধা এবং পর্যাপ্ত স্থান রয়েছে, যা এলাকার বাসিন্দা এবং দর্শনার্থীদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এছাড়া, ‘তরণ্য’ নামে একটি নতুন বিনোদন ও অনুষ্ঠান কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে, যা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী এবং কমিউনিটি ইভেন্টের জন্য একটি আধুনিক মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।

Advertisements

মমতা বলেন, “নিউ টাউন শুধু একটি আবাসিক এলাকা নয়, এটি একটি স্মার্ট শহর, যেখানে আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে সংস্কৃতি ও পরিবেশের সমন্বয় থাকবে।”

কেন্দ্রীয় সরকারের উপর সমালোচনা

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “কেন্দ্র আমাদের ২৪,০০০ কোটি টাকার তহবিল বকেয়া রেখেছে। আমরা ভিক্ষা চাই না, আমরা আমাদের অধিকার চাই।” তিনি জানান, ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ১৪,৭৭৩ কোটি টাকা ব্যয় করছে, যা সম্পূর্ণভাবে রাজ্যের তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা গরিব মানুষের জন্য কাজ করছি। কেন্দ্র যদি তহবিল না দেয়, আমরা নিজেদের অর্থে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৮ লক্ষ পরিবারকে ঘর দেব।”

Nimisha Priya: ফাঁসির মঞ্চে জঙ্গি জহ্লাদের হাসি, নিমিষাকে বাঁচাতে কূটনৈতিক যুদ্ধে ভারত

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) প্রতি জনগণের আস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমার কোনো পরিবার নেই, তৃণমূলই আমার পরিবার। আমরা জনগণের জন্য কাজ করে যাব।” তিনি দলের বিধায়কদের ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।

‘নিজন্ন’ এবং ‘সুজন্ন’ আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাশ্রয়ী আবাসন এবং শহুরে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ কেন্দ্রীয় তহবিলের অভাব সত্ত্বেও রাজ্যের গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে।

‘সুসম্পন্ন’ এবং ‘তরণ্য’ প্রকল্পগুলি নিউ টাউনকে একটি আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী দিনে এই প্রকল্পগুলি রাজ্যের উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।