WBCHSE: পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবার দ্বাদশ শ্রেণির সেমিস্টার পরীক্ষা, অনলাইনে প্রবেশপত্র

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) রাজ্যের শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবারের মতো…

Bengal’s First Class 12 Semester Exams: Admit Cards Issued Online

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) রাজ্যের শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবারের মতো সেমিস্টার পরীক্ষার আয়োজন করছে। এই পরীক্ষার প্রবেশপত্র অনলাইনে জারি করা হবে বলে সংসদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। এই উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষার বিবরণ
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যে সমস্ত শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণি পাশ করেছে, তারা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশ নেবে। এটি প্রথমবারের মতো সংসদ দ্বাদশ শ্রেণির জন্য সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজন করছে।” এই পরীক্ষাগুলি ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই পরীক্ষাগুলি সম্পূর্ণভাবে OMR (Optical Mark Recognition) শিটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা হবে।

   

এই সেমিস্টার পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি আধুনিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষানীতি ২০২৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাগত উৎকর্ষতা বাড়ানো। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার চাপ কমিয়ে তাদের পড়াশোনার উপর ধারাবাহিক মনোযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনলাইনে প্রবেশপত্র: ডিজিটাল শিক্ষার দিকে পদক্ষেপ
প্রবেশপত্র অনলাইনে জারির সিদ্ধান্ত শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে একটি বড় পদক্ষেপ। WBCHSE-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং দ্রুত করবে। সংসদের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, “অনলাইন প্রবেশপত্র জারির মাধ্যমে আমরা সময় বাঁচাতে এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে চাই। এটি শিক্ষার্থীদের জন্যও সুবিধাজনক হবে।”

শিক্ষার্থীদের তাদের নিবন্ধন নম্বর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যবহার করে ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হবে। এই প্রক্রিয়া শুরু হবে পরীক্ষার তারিখের কয়েক সপ্তাহ আগে, এবং সংসদ স্কুলগুলির মাধ্যমে এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জানানোর ব্যবস্থা করবে। এই ডিজিটাল পদ্ধতি শুধুমাত্র সময় এবং সম্পদের সাশ্রয়ই নয়, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হিসেবেও কাজ করবে, কারণ কাগজের ব্যবহার কমবে।

OMR শিটের ব্যবহার: একটি নতুন অভিজ্ঞতা
দ্বাদশ শ্রেণির সেমিস্টার পরীক্ষায় OMR শিটের ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এবং সঠিক করবে। OMR শিটে শিক্ষার্থীদের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, যা কম্পিউটারের মাধ্যমে স্ক্যান করে দ্রুত ফলাফল ঘোষণার সুযোগ দেবে। এই পদ্ধতি ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়, তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এটি প্রথমবার প্রয়োগ করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য এই নতুন পদ্ধতি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কলকাতার একটি স্কুলের শিক্ষক সুজিত মণ্ডল বলেন, “OMR শিটে উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমরা ইতিমধ্যে মক টেস্টের মাধ্যমে তাদের এই পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত করানো শুরু করেছি।” সংসদও স্কুলগুলির জন্য গাইডলাইন জারি করেছে, যাতে শিক্ষার্থীরা এই নতুন পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত হতে পারে।

Advertisements

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই নতুন সেমিস্টার পদ্ধতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কলকাতার একজন শিক্ষার্থী, অর্পিতা দাস, বলেন, “সেমিস্টার পদ্ধতি আমাদের পড়াশোনাকে আরও সংগঠিত করবে। তবে OMR শিটে পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে একটু ভয় আছে, কারণ এটি আমাদের জন্য নতুন।” অন্যদিকে, হাওড়ার শিক্ষার্থী রাহুল সিং বলেন, “অনলাইনে প্রবেশপত্র পাওয়া খুবই সুবিধাজনক। এটি আমাদের সময় বাঁচাবে এবং স্কুলে গিয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহের ঝামেলা কমবে।”

শিক্ষকরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। মেদিনীপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মলয় রায় বলেন, “সেমিস্টার পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করবে। এছাড়া, OMR শিটের ব্যবহার ফলাফল প্রক্রিয়াকে দ্রুত করবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী।” তবে, তিনি জানান যে, গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল প্রবেশপত্র ডাউনলোডের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস একটি সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে সংসদকে স্কুলগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই নতুন সেমিস্টার পদ্ধতি এবং ডিজিটাল প্রবেশপত্র জারির উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, OMR শিটে পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। সংসদ এই বিষয়ে স্কুলগুলির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করছে, যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই নতুন পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

ভবিষ্যতে, এই সেমিস্টার পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত মান উন্নত করতে এবং তাদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে সহায়ক হবে। এটি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করতে এবং সময়মতো সংশোধন করতে সাহায্য করবে। এছাড়া, ডিজিটাল প্রবেশপত্র এবং OMR শিটের ব্যবহার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক এবং দক্ষ করে তুলবে।

পশ্চিমবঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা এবং অনলাইনে প্রবেশপত্র জারির উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাগত অভিজ্ঞতাকে আরও সংগঠিত এবং প্রযুক্তি-বান্ধব করে তুলবে। তবে, এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে সঠিক বাস্তবায়ন, শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ এবং প্রশাসনিক দক্ষতার উপর। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে একটি আধুনিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।