উত্তরবঙ্গের কৃষিপ্রধান অঞ্চলে এবার বর্ষা যেন রীতিমতো নিরুত্তাপ। (North Bengal) শ্রাবণের মাঝামাঝি এসে এখনও আশানুরূপ বৃষ্টি নেই। উলটে তীব্র গরমে মাঠের ধানের বীজতলা ঝলসে গিয়ে হলুদ হয়ে গেছে। নতুন চারা পাওয়া যাচ্ছে না। সেচের জলে ধান রোপরা হলেও তীব্র রোদের তাপে জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। ফলে ধানের চারার বৃদ্ধি থমকে গেছে। চাষের কাজ এখনও পর্যন্ত ৪০ শতাংশ জমিতেই সীমাবদ্ধ। বাকি ৬০ শতাংশ জমি অনাবাদী পড়ে আছে। এই অবস্থায় আমন ধানের উৎপাদন নিয়ে চরম উদ্বেগে উত্তরবঙ্গের কৃষক সমাজ।
জলপাইগুড়ি জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের (North Bengal) কো-অর্ডিনেটর বিপ্লব দাস জানিয়েছেন, “এই সময়ের মধ্যে সাধারণত ৬০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবার মাত্র ৪০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ সম্ভব হয়েছে। জলের অভাবে সেই চারার অবস্থাও আশাপ্রদ নয়।” তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ধানের উৎপাদন উদ্বেগজনকভাবে কমে যেতে পারে। এবং বর্ষা না হলে এই বিপর্যয় ঠেকানোর কোনও বিকল্প নেই।(North Bengal)
মাঠে জল নেই, বিক্ষিপ্তভাবে মাঝেমধ্যে হালকা বৃষ্টি হলেও সেটা খেতে কোনও উপকারে আসছে না। জমিতে জল দাঁড়াচ্ছে না। ফলে উঁচু জমিতে চারা রোপণের সুযোগই নেই। নিচু জমিতেও জলের টান পড়েছে। কিছু কৃষক ঘণ্টায় ২০০ টাকা খরচ করে পাম্প চালিয়ে সেচের জলে ধান চারা রোপণ করেছেন। কিন্তু তার পরেও সেই জমিতে মাটি শুকিয়ে ফেটে গেছে। এ যেন খরার ছবি।
ধানের বীজতলা থেকে চারা ওঠার আগেই সেগুলো রোদের দাপটে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে বপন করতে হলেও চারা মিলছে না গ্রামে। স্থানীয় ধানচাষি গৌরাঙ্গ শর্মা বলছেন, “জলের অভাবে গ্রামের প্রায় সব জমির ধানচারা শুকিয়ে যাচ্ছে। চারার রং হলুদ হয়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে আমাদের সমস্ত পরিশ্রম জলে যাবে।”(North Bengal)
এই চাষ হেরে গেলে শুধু ধানের উৎপাদন নয়, ধস নামবে শীতকালীন সবজি উৎপাদনেও। কারণ উঁচু জমিতে ধান কাটার পর সেই জমিতেই শুরু হয় পুজোর সবজি—লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং, শাক প্রভৃতি চাষ। কিন্তু এবছর যদি ধান রোপণই না হয় বা রোপর পর চারা বাঁচানো না যায়, তবে ওই জমিগুলো অনাবাদী থেকে যাবে। ফলে সবজির উৎপাদনেও মার খাবে গোটা উত্তরবঙ্গ।(North Bengal)
আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, অন্তত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সেই অর্থে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। এই খবর শুনে কৃষকদের হতাশা আরও বাড়ছে।
জমির অবস্থা এমনই হয়েছে যে, খেত চাষযোগ্য রাখার জন্য যা জল দেওয়া হচ্ছে তাও স্থায়ী হচ্ছে না। রোদে জল এক ঘন্টার মধ্যে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক কৃষক ইতিমধ্যেই চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত হতে পারে, তা নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা না গেলেও কৃষি দপ্তরের একাংশ মনে করছে, কয়েকশো কোটি টাকার ধান উৎপাদনে ধাক্কা খেতে পারে উত্তরবঙ্গে।
সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতি যে এক গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি, তা বলাই যায়। এখন শুধু একটাই ভরসা—বৃষ্টি। না হলে, ধান তো নয়ই, পুজোর সবজির প্লেটেও নেমে আসবে ফাঁকা মাঠের ছায়া।