ভারতের বার্ষিক স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণ ২০২৪-২৫-এর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে (Beautiful Cities)এবং মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর টানা অষ্টমবারের মতো দেশের সবচেয়ে পরিষ্কার শহরের মর্যাদা অর্জন করেছে । গুজরাটের সুরাট দ্বিতীয় এবং মহারাষ্ট্রের নবি মুম্বই তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই স্বচ্ছতা সমীক্ষায় শীর্ষে থাকা তিনটি শহরই বিজেপি শাসিত রাজ্যে অবস্থিত, যা রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বিরোধী দলগুলি এই ফলাফলের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আজ নয়াদিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার প্রদান করেন। ইন্দোরের এই অষ্টম জয় স্বচ্ছ ভারত অভিযানের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
এই শহরটি তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দরজায় দরজায় আবর্জনা সংগ্রহ, পৃথকীকরণ এবং কম্পোস্টিংয়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতার মানদণ্ড স্থাপন করেছে। রাজওয়াড়া প্যালেস, লালবাগ প্যালেস, সরাফা বাজারের মতো পর্যটন স্থানগুলি আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে মুক্ত, যা ইন্দোরকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণে ইন্দোরের ধারাবাহিক সাফল্যের পিছনে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পৌরসংস্থার কার্যকর ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সুরাট, যে শহর গত বছর ইন্দোরের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল, এবার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। হীরা ও টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই শহরটি পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।
সুরাট পৌরসংস্থা বর্জ্য পৃথকীকরণ, পুনর্ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের মাধ্যমে শহরটিকে পরিষ্কার রাখতে সক্ষম হয়েছে। নবি মুম্বই, যিনি ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে, পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশংসিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয় (MoHUA) ২০১৬ সালে স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণ শুরু করে, যা বিশ্বের বৃহত্তম নগর পরিচ্ছন্নতা সমীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। এই বছরের সমীক্ষায় নতুন কাঠামো প্রবর্তন করা হয়েছে। শহরগুলিকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। অতি ক্ষুদ্র (২০,০০০-এর কম), ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় এবং মিলিয়ন প্লাস (১০ লক্ষের বেশি)।
এই নতুন কাঠামোর মাধ্যমে ছোট শহরগুলিকেও তাদের পরিচ্ছন্নতার প্রচেষ্টার জন্য স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ‘সুপার স্বচ্ছ লিগ’ নামে একটি বিশেষ বিভাগ চালু করা হয়েছে, যেখানে ইন্দোর, সুরাটের মতো শীর্ষস্থানীয় শহরগুলি অতিরিক্ত মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করবে।
২০২৪-২৫ সালের স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণে ৪৬টি সূচকের ভিত্তিতে ৪,৪৭৭টি শহর, ৬১টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং ৮৮টি গঙ্গা শহরের মূল্যায়ন করা হয়েছে। মূল্যায়নের মানদণ্ডের মধ্যে ছিল দরজায় দরজায় বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রতিবন্ধী-বান্ধব শৌচাগার এবং নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া। সমীক্ষায় প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে, যা এই উদ্যোগকে একটি জন-আন্দোলনে রূপ দিয়েছে।
বাজার থেকে নিনজা-র এই বাইক তুলে নিচ্ছে কাওয়াসাকি, নেপথ্যে কারণ কী?
বিরোধীদের সমালোচনা
স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণের ফলাফল ঘোষণার পর বিরোধী শিবির এই সমীক্ষার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা এই সমীক্ষাকে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, “শীর্ষ তিনটি শহরই বিজেপি শাসিত রাজ্যের। এটা কি নিরপেক্ষ জরিপ? পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমগ্রাম, কল্যাণী এবং হাওড়া তালিকার নীচে রয়েছে, যা স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
রাজনৈতিক প্রভাব
বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ফলাফল রাজনৈতিক তরজাকে আরও উত্তপ্ত করেছে। ইন্দোর, সুরাট এবং নবি মুম্বইয়ের সাফল্য বিজেপির শাসন ব্যবস্থার প্রশংসা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিরোধী ইন্ডিয়া জোট এই ফলাফলকে বিজেপির ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবে চিহ্নিত করে জনগণের মধ্যে তাদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি শহরের নীচের স্থান অধিকার তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণ ২০২৪-২৫-এর ফলাফল ইন্দোর, সুরাট এবং নবি মুম্বইয়ের পরিচ্ছন্নতার প্রচেষ্টাকে উদযাপন করলেও, এটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির শহরগুলির শীর্ষস্থান অধিকার বিরোধীদের কাছে সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে শহরগুলির পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি স্পষ্ট। আগামী দিনে এই সমীক্ষার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হলে, এটি ভারতের নগর পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।