মহিলা টেনিসের (Women Tennis Players) জগতে সেরেনা উইলিয়ামসের অবসরের পর থেকে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা গ্র্যান্ড স্ল্যামের মঞ্চে আধিপত্য বিস্তার করছেন। তবে, খুব কম খেলোয়াড়ই ধারাবাহিকভাবে আধিপত্য বজায় রাখতে পেরেছেন। বিশেষ করে উইম্বলডনের মতো টুর্নামেন্টে ২০১৬ সালের পর থেকে আটজন নতুন চ্যাম্পিয়ন উঠে এসেছেন, যা মহিলা টেনিসের প্রতিযোগিতার তীব্রতা এবং প্রতিভার বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা সক্রিয় মহিলা একক টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে শীর্ষ চারজনের দিকে নজর দেব, যাঁরা সর্বাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন ভিনাস উইলিয়ামস, ইগা স্বিয়াতেক, নাওমি ওসাকা এবং আরিনা সাবালেঙ্কা। তাঁদের অর্জন এবং ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য মুহূর্তগুলি নিয়ে আলোচনা করছি এই প্রতিবেদনে।
ভিনাস উইলিয়ামস: ৭টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা
৪৫ বছর বয়সী ভিনাস উইলিয়ামস এখনও অবসর নেননি এবং তিনি সক্রিয় মহিলা একক খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী। তাঁর ক্যারিয়ারে সাতটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি উইম্বলডন এবং দুটি ইউএস ওপেন। তাঁর ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তাঁর বোন সেরেনা উইলিয়ামসের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পরিচিত। দুই বোন গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে নয়বার মুখোমুখি হয়েছেন, যেখানে সেরেনা সাতবার জিতেছেন। ভিনাসের আধিপত্য বিশেষ করে উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে ছিল, যেখানে তিনি দুইবার শিরোপা রক্ষা করেছেন। ২০০৮ সালে তাঁর শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পর তিনি ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং উইম্বলডনের ফাইনালে পৌঁছেছিলেন, যা তাঁর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতার প্রমাণ। ২০২৪ সালে মিয়ামিতে তাঁর শেষ ম্যাচের পর তিনি আর কোনও টুর্নামেন্টে অংশ নেননি। তবে, তিনি ওয়াশিংটন ও oপেনে (WTA ৫০০) ওয়াইল্ডকার্ড গ্রহণ করে ২০২৫ সালের ২১ জুলাই থেকে প্রতিযোগিতায় ফিরছেন।
ইগা স্বিয়াতেক: ৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা
২৩ বছর বয়সী ইগা স্বিয়াতেক মহিলা টেনিসে ‘ক্লে কোর্টের রানি’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০২৪ সালে জেসমিন পাওলিনিকে হারিয়ে তাঁর চতুর্থ ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা জিতেছেন। তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় এসেছিল ২০২০ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে, যেখানে তিনি সোফিয়া কেনিনকে পরাজিত করেন। ২০২২ সালে তিনি ইউএস ওপেন জিতে সবাইকে অবাক করেন, ওনস জাবেউরকে সরাসরি সেটে পরাজিত করে। তবে, তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে ২০২৫ সালে উইম্বলডনে। ঘাসের কোর্টে তাঁর দুর্বলতা ভেঙে, অষ্টম বাছাই হিসেবে তিনি মাত্র ৩৫ গেম হারিয়ে প্রথম উইম্বলডন শিরোপা জিতেছেন, ফাইনালে আমান্ডা আনিসিমোভাকে ৬-০, ৬-০ গোলে পরাজিত করে। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে ৬-০ রেকর্ড বজায় রেখেছেন এবং সেরেনা উইলিয়ামসের পর সর্বকনিষ্ঠ মহিলা হিসেবে তিনটি ভিন্ন পৃষ্ঠে (ক্লে, হার্ড, ঘাস) গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন।
নাওমি ওসাকা: ৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা
নাওমি ওসাকা হার্ড কোর্টে তাঁর আধিপত্যের জন্য ‘হার্ড কোর্টের রানি’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১৮ সালে ইউএস ওপেনে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন, যা ছিল একটি বিতর্কিত ফাইনাল। এরপর ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ২০২০ সালে দ্বিতীয় ইউএস ওপেন, এবং ২০২১ সালে দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে তিনি মোট চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা অর্জন করেন। তবে, ২০২১ সালের পর তাঁর পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব দেখা যায়। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ইনজুরির কারণে তিনি ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং উইম্বলডন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। সম্প্রতি তিনি WTA ট্যুরে ফিরেছেন এবং ২০২৫ উইম্বলডনে তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছেন, যা তাঁর পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দেয়। ওসাকার আক্রমণাত্মক বেসলাইন খেলা এবং শক্তিশালী সার্ভ তাঁকে ভবিষ্যতে আরও শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছে।
আরিনা সাবালেঙ্কা: ৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা
বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় আরিনা সাবালেঙ্কা WTA-তে ইগা স্বিয়াতেকের পাশাপাশি সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড়। হার্ড কোর্টে তাঁর দক্ষতা অতুলনীয়, এবং ২০২৫ সালে তিনি ক্লে এবং ঘাসের কোর্টেও নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তিনি মোট তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতেছেন, যদিও ছয়টি ফাইনালে অংশ নিয়েছেন। ২০২৩ সালের ইউএস ওপেন এবং ২০২৫ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনে তিনি কোকো গফের কাছে হেরেছেন, যেখানে তিনি এক সেট এগিয়ে থাকলেও আবেগের বশে বেশ কিছু ভুল করেছেন। ২০২৫ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তিনি টানা তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ছিলেন, কিন্তু ম্যাডিসন কীসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁকে হারিয়েছে। সাবালেঙ্কার শক্তিশালী সার্ভ এবং আক্রমণাত্মক খেলার ধরন তাঁকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের সম্ভাবনা দেয়।
মহিলা টেনিসের ভবিষ্যৎ
মহিলা টেনিস বর্তমানে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে নতুন প্রতিভারা প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ভিনাস উইলিয়ামস তাঁর অভিজ্ঞতা এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রেরণা। ইগা স্বিয়াতেক তাঁর বয়সের তুলনায় অসাধারণ ধারাবাহিকতা এবং বহুমুখী খেলার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। নাওমি ওসাকা তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের লড়াই সত্ত্বেও ফিরে এসে প্রমাণ করেছেন যে তিনি এখনও শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। আরিনা সাবালেঙ্কা তাঁর শক্তিশালী খেলার মাধ্যমে হার্ড কোর্টে আধিপত্য বজায় রেখেছেন এবং অন্যান্য পৃষ্ঠেও উন্নতি করছেন। এই চার খেলোয়াড় মহিলা টেনিসের বৈচিত্র্য এবং প্রতিযোগিতার প্রতীক। তাঁদের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ভারতীয় টেনিস ভক্তদের মধ্যেও উৎসাহ সৃষ্টি করছে।