শেয়ার বিক্রির আগে জেনে নিন শর্ট-টার্ম ও লং-টার্ম গেইনের পার্থক্য

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে এবং বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সাফল্য নিশ্চিত করতে, প্রথমেই প্রয়োজন মূল বিষয়গুলো বোঝা (Investor Should Know)। এর মধ্যে অন্যতম হলো ক্যাপিটাল গেইনস,…

Step-by-Step Guide for NRIs to Invest in Indian Stock Market: PIS, Non-PIS, and Tax Rules

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে এবং বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সাফল্য নিশ্চিত করতে, প্রথমেই প্রয়োজন মূল বিষয়গুলো বোঝা (Investor Should Know)। এর মধ্যে অন্যতম হলো ক্যাপিটাল গেইনস, যা দুই ভাগে বিভক্ত: শর্ট-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস (STCG) এবং লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস (LTCG)। এই দুই ধরনের গেইনের উপর ভিত্তি করে ট্যাক্স এবং বিনিয়োগের কৌশল অনেকাংশেই নির্ভর করে।

শর্ট-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস (STCG) বলতে বোঝায় এমন লাভ যা অল্প সময়ের জন্য রাখা কোনো সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত হয়। সাধারণত এই মেয়াদ কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত হতে পারে। শেয়ার বাজারে লেনদেন, বন্ড, এবং রিয়েল এস্টেটে এ ধরনের লাভ বেশি দেখা যায়। STCG সাধারণত ব্যক্তির আয়ের করের হারের উপর ভিত্তি করে কর ধার্য হয়, যা ভারতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

   

অন্যদিকে, লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস (LTCG) বলতে বোঝানো হয় সেই লাভ যা কোনো সম্পদ এক বছরের বেশি সময় ধরে ধরে রাখার পর বিক্রি করে অর্জিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে LTCG-র উপর কম হারে কর ধার্য করা হয়। ভারতে LTCG-র উপর সাধারণত প্রায় ২০ শতাংশ কর নির্ধারিত, তাছাড়াও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কর মওকুফের সুযোগও থাকে।

মূল পার্থক্য:
STCG এবং LTCG-এর মূল পার্থক্য হলো করের হারে। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তি এক বছরের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করেন এবং লাভ করেন, তাহলে সেই লাভের উপর আয়কর হারের ভিত্তিতে কর দিতে হবে। আর যদি একই শেয়ার এক বছরের বেশি সময়ের জন্য ধরে রাখা হয়, তখন সেই লাভের উপর তুলনামূলকভাবে কম হারে কর ধার্য হয়।

ভারতে অনেক বিনিয়োগকারী দীর্ঘমেয়াদি হোল্ডিং পছন্দ করেন, কারণ এতে করের সুবিধা পাওয়া যায়। এজন্য বিনিয়োগকারীরা প্রায়শই তাদের শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, এবং অন্যান্য সম্পদ এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখেন। তবে এখানে বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট বা মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আছে। উদাহরণস্বরূপ, রিয়েল এস্টেটে LTCG হিসেবে বিবেচনা করতে হলে দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাখতে হয়।

ট্যাক্স-অপ্টিমাইজেশন কৌশল:
শুধু হোল্ডিং পিরিয়ডের উপর নির্ভর করলেই হবে না, বিনিয়োগকারীদের আরও কিছু কৌশল অবলম্বন করা উচিত। এর মধ্যে একটি জনপ্রিয় কৌশল হলো ট্যাক্স-লস হারভেস্টিং। এই কৌশলে বিনিয়োগকারী তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বা কম পারফর্ম করা সম্পদ বিক্রি করে, যাতে সেই ক্ষতি লাভের বিপরীতে দেখানো যায়। এতে করে মোট করযোগ্য আয় কমিয়ে ফেলা যায়।

Advertisements

তাছাড়াও, অনেক বিনিয়োগকারী ট্যাক্স-এক্সেম্পট রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্ট যেমন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) এবং ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS)-এ বিনিয়োগ করে থাকেন। এই ধরনের অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করলে ক্যাপিটাল গেইনের উপর তৎক্ষণাৎ কর দিতে হয় না, বরং টাকা তুলতে গেলে তখন কর দিতে হয়। ফলে বিনিয়োগের সময়কালে ট্যাক্সের বোঝা অনেকটাই হালকা হয়ে যায় এবং সুদ বা লাভের উপর কম্পাউন্ডিং বেনিফিটও পাওয়া যায়।

বিনিয়োগের কৌশল এবং সচেতনতা:
আজকের দিনে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রটি সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া অপরিহার্য। এর জন্য নিয়মিত আর্থিক সংবাদ, সরকারি নিয়মাবলী এবং পেশাদার পরামর্শকের সাথে

পরামর্শ করা জরুরি।
উদাহরণস্বরূপ, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে ইকুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখলে LTCG হিসেবে ধরা হয় এবং ১ লাখ টাকার বেশি লাভের উপর ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। অন্যদিকে, ডেব্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাখতে হয় LTCG হিসেবে বিবেচনার জন্য। অতএব, শুধুমাত্র লাভের পরিমাণ নয়, কর কাঠামোও বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা পালন করে।

বিনিয়োগ মানে শুধু টাকা লাগানো নয়, বরং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। শর্ট-টার্ম এবং লং-টার্ম গেইনসের পার্থক্য বোঝা, করের হার জানা এবং কর কমানোর কৌশল শিখে বিনিয়োগকারী তার অর্থনৈতিক যাত্রাকে আরও সুরক্ষিত ও লাভজনক করতে পারেন।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা, নিয়মিত নজর রাখা, এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের বিনিয়োগের পরিকল্পনা নির্ধারণের সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আর্থিক সাফল্যের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।