ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় পদক্ষেপ গেইলের, ভিটলের সঙ্গে চুক্তি

ভারতের শীর্ষ গ্যাস সংস্থা গেইল GAIL) লিমিটেড সম্প্রতি সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড-এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি (Sales and…

GAIL Inks Long-Term LNG Supply Agreement With Vitol; Deliveries To Begin 2026

ভারতের শীর্ষ গ্যাস সংস্থা গেইল GAIL) লিমিটেড সম্প্রতি সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড-এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি (Sales and Purchase Agreement – SPA) স্বাক্ষর করেছে। মঙ্গলবার গেইলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এই চুক্তিটি জানুয়ারি ২০২৪-এ স্বাক্ষরিত বাইন্ডিং টার্ম শীটের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে গেইল প্রায় ১০ বছর ধরে বার্ষিক প্রায় ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন (MMTPA) এলএনজি সরবরাহ করবে। সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। এই চুক্তির আওতায় ভিটল তার বৈশ্বিক এলএনজি পোর্টফোলিও থেকে গেইলকে এলএনজি সরবরাহ করবে।

   

গেইলের পরিচালক (মার্কেটিং) সঞ্জয় কুমার এই অংশীদারিত্বের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “ভারতের বাড়তে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গেইল দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি পোর্টফোলিও সম্প্রসারণ করছে। আমরা ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরে আনন্দিত। এই সমঝোতা গেইলের ক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আরও দৃঢ় করবে এবং বিভিন্ন ধরণের গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যকে সমর্থন করবে।”

ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাসের ভবিষ্যৎ:
বর্তমানে ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এলএনজি আমদানিকারক দেশ। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা আগামী দশকে ধারাবাহিকভাবে বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সরকার ইতিমধ্যেই ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রণে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশ ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দেশজুড়ে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে এই ক্ষমতা ছিল ২১ MMTPA, বর্তমানে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশবান্ধব এবং তুলনামূলকভাবে কম দূষণকারী জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়বে। শহরাঞ্চলে পাইপের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সরবরাহ এবং শিল্প কারখানায় ক্লিন এনার্জি হিসেবে ব্যবহারের জন্য গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

ভিটলের ভূমিকা এবং প্রতিক্রিয়া:
ভিটল এশিয়ার চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার ও এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য জে এনজি বলেন, “ভারতের সঙ্গে এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরে আমরা গর্বিত। ভারত আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার এবং আমাদের বৈচিত্র্যময় এলএনজি পোর্টফোলিওর মাধ্যমে আমরা গেইলকে স্থিতিশীল, প্রতিযোগিতামূলক ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই অংশীদারিত্ব আমাদের বিশ্বব্যাপী কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

Advertisements

ভিটল বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এনার্জি এবং কমোডিটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি কেবলমাত্র তেল ও গ্যাস কেনাবেচা করেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি অবকাঠামোতেও বিশাল বিনিয়োগ করেছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

গেইলের প্রসঙ্গ:
গেইল (ইন্ডিয়া) লিমিটেড একটি মহারত্ন সেন্ট্রাল পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজ এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সংস্থা। সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক, প্রসেসিং এবং পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট, আপস্ট্রিম তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র, এবং একাধিক এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল।

এছাড়া, গেইল দেশের বিভিন্ন মেট্রো শহরে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (CGD) প্রকল্পের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সরবরাহ এবং সিএনজি স্টেশনগুলোর মাধ্যমে পরিবহণ খাতে গ্যাস সরবরাহ করছে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের চুক্তি ভারতের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জ্বালানির চাহিদা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ফলে, এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি গ্যাসের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ওঠানামা থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়ক হবে।

সরকারও বিভিন্ন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতিকে উৎসাহিত করছে। দেশে নতুন পাইপলাইন নেটওয়ার্ক, টার্মিনাল এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রবাহ ও সহজলভ্যতা বাড়ানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই চুক্তি ভারতের জ্বালানি খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা দেশের শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।