ভারত আজ বৈশ্বিক প্রতিভার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC Talent) প্রতিভার ৩২ শতাংশ, সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথেমেটিকস (STEM) কর্মশক্তির ২৮ শতাংশ এবং বৈশ্বিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিভার ২৩ শতাংশ ভারতের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
সোমবার ‘সিআইআই জিসিসি বিজনেস সামিট ২০২৫’-এর বিশেষ মন্ত্রীসভা প্লেনারি এবং রিপোর্ট ব্যাক সেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি এসব তথ্য শেয়ার করেন। তিনি বলেন, “গ্লোবালি আমাদের এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দক্ষতার প্রবেশ সবচেয়ে বেশি। গত এক দশকে দেশে ৭টি নতুন আইআইটি এবং ১৬টি নতুন আইআইআইটি স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে উচ্চ শিক্ষার মান ও প্রযুক্তি দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।”
অর্থমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, ভারতের মধ্যে মহিলা STEM স্নাতকের হার ৪২.৭ শতাংশ, যা বৈশ্বিক স্তরে অন্যতম সর্বোচ্চ। এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ জিসিসি কর্মশক্তিতে প্রায় ৩৫ শতাংশ মহিলা অংশগ্রহণ করে থাকেন।
সীতারামন জানান, ভারতের জিসিসি গুলো এখন আর শুধুমাত্র ব্যাক-অফিস সাপোর্ট কেন্দ্র হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়, বরং উদ্ভাবন এবং নেতৃত্বের কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
১৯৮৫ সাল থেকে প্রায় ৩০ বছর সময় লেগেছিল ১,০০০টি জিসিসি স্থাপনে। কিন্তু গত এক দশকে অতিরিক্ত ৮০০টি জিসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে ভারত ১,৮০০টিরও বেশি জিসিসির আবাসস্থল, যেখানে ২১.৬ লাখ পেশাদার কর্মরত আছেন। এগুলো দেশীয় জিডিপিতে প্রায় ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই অবদান ১৫০–২০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, ফর্চুন ৫০০ তালিকাভুক্ত কোম্পানির অর্ধেকেরও বেশি এখন ভারতে তাদের উপস্থিতি স্থাপন করেছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো দেশের সমৃদ্ধ প্রতিভা ভাণ্ডার, প্রতিযোগিতামূলক খরচ এবং পরিপক্ক ইকোসিস্টেম।
তিনি আরও বলেন, “ভারতের উদীয়মান প্রতিভা ইঞ্জিন হিসেবে আত্মপ্রকাশই এই সাফল্যের ভিত্তি।” প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (PMKVY)-এর মাধ্যমে ১.৬ কোটি যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, “আমরা শুধু ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি না, বরং ভবিষ্যৎ তৈরি করছি।”
অর্থমন্ত্রী প্রশাসনিক সমন্বয়, অনুমোদন সময়সীমা কমানো, অগ্রিম প্রাইসিং এগ্রিমেন্টসহ (APA) ট্যাক্সের ক্ষেত্রে নিশ্চিততা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। এগুলো সবই জিসিসির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তিনি টিয়ার ২ এবং টিয়ার ৩ শহরগুলোতে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং গিফট সিটির মডেলকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। “ভারতের এই সুবর্ণ সুযোগ হারানো উচিত নয়,” বলে মন্তব্য করে সীতারামন জিসিসি বৃদ্ধির জন্য পূর্ণ সরকারী সমর্থনের আশ্বাস দেন।
সম্মেলনে সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিত ব্যানার্জি সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা করে জানান, সরকার জিসিসি কেন্দ্রগুলিকে একটি জাতীয় অগ্রাধিকারে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, “ভারত যেন শুধু জিসিসির সংখ্যায় বিশ্বনেতা না হয়, বরং উদ্ভাবন, মান এবং কৌশলগত ক্ষমতার ক্ষেত্রেও বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়—এই লক্ষ্যেই সিআইআই সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সম্মেলনের প্রথম ভাগে বাণিজ্য দফতরের সচিব সুনীল বার্থওয়াল জানান, “আজকের দিনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মানদণ্ড হিসেবে শুধুমাত্র উৎপাদন খাতের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা যথেষ্ট নয়। পরিষেবা খাতের প্রসারের কারণে জিসিসি কেন্দ্রগুলো উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর জন্য পরিষেবা প্রদানের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।”
বার্থওয়াল ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের (FTA) গুরুত্ব পুনরায় উল্লেখ করে বলেন, “ভারত-যুক্তরাজ্য FTA-তে উদ্ভাবনের উপর বিশেষ অধ্যায় রয়েছে, যা অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে উদ্ভাবন করিডোরকে শক্তিশালী করছে।” তিনি আরও বলেন, FTA বিভিন্ন দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রক নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত ও স্থায়ী করতে সাহায্য করে।
ভারত সরকারের এই সমন্বিত উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা ভারতকে একটি বৈশ্বিক জিসিসি কেন্দ্র হিসেবে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করছে। দেশীয় প্রতিভার সঠিক ব্যবহার, অবকাঠামো ও নীতি সহায়তা, এবং উদ্ভাবনমুখী মানসিকতার মাধ্যমে ভারত আগামী দশকে জিসিসির বিশ্বমঞ্চে একটি নতুন ইতিহাস রচনা করতে চলেছে।