আজকের দিনে অনেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, কেউ ছাত্র, কেউ আবার গৃহিণী বা চাকরির খোঁজে থাকা মানুষ। এদের মধ্যে অনেকের বার্ষিক আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকে। অনেকেই ভাবতে পারেন, আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করা কি আদৌ প্রয়োজন?
আইন অনুযায়ী, যদি আপনার আয় করযোগ্য সীমার নিচে হয়, তাহলে আপনাকে আইটিআর ফাইল করা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবুও ‘নিল আইটিআর’ (Nil ITR) ফাইল করা অনেক বেশি উপকারী। এটি আয়কর দফতরকে জানান দেয় যে, আপনার আয় হয়েছে, কিন্তু সেটি করযোগ্য নয়।
কারা নিল আইটিআর ফাইল করতে পারেন?
যদি আপনার বয়স ৬০ বছরের কম হয় এবং বার্ষিক আয় পুরনো ট্যাক্স রেজিম অনুযায়ী ২.৫ লাখ টাকার নিচে হয়, অথবা নতুন রেজিম অনুযায়ী ৩ লাখ টাকার নিচে হয়, তাহলে আপনি নিল আইটিআর ফাইল করতে পারবেন। এছাড়া, বিভিন্ন ধরণের ছাড় (যেমন 80C, 80D) নিলে আপনার আয় করযোগ্য সীমার নিচে নেমে গেলেও আপনি নিল রিটার্ন ফাইল করতে পারেন।
কেন নিল আইটিআর ফাইল করা উচিত?
নিল আইটিআর ফাইল করা না হয় আইনি বাধ্যবাধকতা, তবুও এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে:
আয়ের প্রমাণ হিসেবে:
যদি আপনি লোনের জন্য আবেদন করেন বা বিদেশ ভ্রমণের জন্য ভিসা চান, তখন শুধু স্যালারি স্লিপ নয়, আয়কর রিটার্নও চাওয়া হয়। এমনকি আপনার আয় কম হলেও নিল আইটিআর দেখায় যে, আপনি নিয়ম মেনে আয় ঘোষণা করছেন। এর ফলে আপনার আর্থিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।
ট্যাক্স রিফান্ডের জন্য:
আপনার আয় করযোগ্য সীমার নিচে হলেও, ব্যাঙ্ক বা ক্লায়েন্টরা TDS কেটে রাখতে পারে। সেই টাকাটি ফেরত পেতে গেলে রিটার্ন ফাইল করা একমাত্র উপায়। নিল আইটিআর এর মাধ্যমে আপনি সহজেই ট্যাক্স রিফান্ড ক্লেইম করতে পারেন।
ক্যাপিটাল লস ক্যারি ফরোয়ার্ড:
যদি স্টক মার্কেট, মিউচুয়াল ফান্ড বা ক্রিপ্টোতে ক্ষতি হয়ে থাকে, তাহলে সেটিকে পরবর্তী বছরের মুনাফার সাথে সমন্বয় করতে পারেন। তবে, এই ক্ষতি রিপোর্ট করতে হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইটিআর ফাইল করতেই হবে। নাহলে ভবিষ্যতে এই সুবিধা হারাতে হবে।
বিদেশি ভিসার জন্য সহজ প্রক্রিয়া:
আমেরিকা, ইউকে, কানাডা বা ইউরোপের অনেক দেশ ভিসা দেওয়ার সময় আগের বছরের আয়কর রিটার্ন দেখতে চায়। এমনকি বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্রদেরও এই প্রমাণ দেখাতে হয়। নিল আইটিআর থাকলে সহজে প্রমাণ করা যায় যে আপনি ভারতের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল।
সুস্থ আর্থিক রেকর্ড রাখা:
নিয়মিত আইটিআর ফাইল করলে, আপনার PAN অ্যাকটিভ থাকে, ট্যাক্স হিস্ট্রি পরিষ্কার থাকে, এবং ভবিষ্যতে লোন, সাবসিডি বা অন্য কোনো সরকারি সুবিধা পেতে এটি সহায়ক হয়।
উচ্চমূল্যের লেনদেনে প্রয়োজন:
আপনার আয় সীমার নিচে হলেও, কিছু নির্দিষ্ট খরচ বা লেনদেনের ক্ষেত্রে আইটিআর ফাইল করা বাধ্যতামূলক। যেমন—
- বছরে ১ লাখ টাকার বেশি ইলেকট্রিসিটি বিল পরিশোধ করলে
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি জমা করলে
- বিদেশ সফরে ২ লাখ টাকার বেশি খরচ করলে
এই ধরণের ক্ষেত্রে সেকশন 139(1)-এর সেভেন্থ প্রোভাইসো অনুযায়ী রিটার্ন ফাইল করা আবশ্যক।
কিভাবে নিল আইটিআর ফাইল করবেন?
- প্রথমে www.incometax.gov.in এ গিয়ে ‘File Income Tax Return’ অপশন বেছে নিন।
- প্রয়োজনীয় ফর্ম (সাধারণত ITR-1) নির্বাচন করুন এবং আয় ও ছাড় সংক্রান্ত তথ্য দিন।
- শূন্য ট্যাক্স লায়াবিলিটি নিশ্চিত হলে রিটার্ন সাবমিট করুন।
- এরপর ই-ভেরিফাই করুন— Aadhaar OTP, নেট ব্যাংকিং অথবা সাইন করা ITR-V কপি CPC বেঙ্গালুরুতে পাঠিয়ে।
অনেকের কাছে নিল আইটিআর ফাইল করা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে ব্যাংক লোন, ভিসা, রিফান্ড, কিংবা সাবসিডি পেতে গেলে এই রিটার্ন খুবই কার্যকর। এটা আয়কর আইন মানার প্রমাণও বটে। সামান্য সময় দিয়ে এই কাজ করলে আপনার আর্থিক রেকর্ড আরও মজবুত হবে এবং ভবিষ্যতের অনেক ঝামেলা এড়ানো যাবে।
অতএব, আপনার আয় যতই কম হোক না কেন, নিল আইটিআর ফাইল করুন এবং অর্থনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিক হিসেবে এগিয়ে যান।