ভোটব্যাংক দুর্নীতি রুখতে হিমন্তর সঙ্গে গাঁটছড়া শুভেন্দুর

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যে বলেছিলেন অসমের জনগনের সময়ে কেউ যদি লেখে তার মাতৃভাষা বাংলা, তবে বোঝা যাবে অসমে কত বিদেশি আছে। স্বভাবতই…

Himanta supports suvendu

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যে বলেছিলেন অসমের জনগনের সময়ে কেউ যদি লেখে তার মাতৃভাষা বাংলা, তবে বোঝা যাবে অসমে কত বিদেশি আছে। স্বভাবতই এই মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক সমালোচনা।

তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উপরতলার নেতা এর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন। আবার আর একটু পিছনে তাকালে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একটি মন্তব্যেও উত্তাল হয়েছিল রাজনৈতিক মহল। তিনি সংবাদ মাধমের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে কোনো বাঙালি যেন কাশ্মীরে না যান।

   

তাতেও ভীষণ চোটে গিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতারা। বলেছিলেন যেখানে স্বয়ং জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এসে বাঙালিদের অনুরোধ করে গেছেন কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য সেখানে শুভেন্দু কি করে এই ধরণের মন্তব্য করতে পারেন। তা ছাড়া বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের আটক করার ঘটনাতেও সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। এবার অসম মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মেলাতে দেখা গেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে।

তিনি তার এক্স হ্যান্ডেলে বলেছেন “অসমের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অবৈধ বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে এক নির্ভীক ও সময়োপযোগী লড়াই চালাচ্ছেন, যা আমাদের দেশের জনসংখ্যাগত অখণ্ডতা রক্ষা করছে। প্রতিটি বাঙালি তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করে তাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলে ভোটব্যাংক রাজনীতি করছে। কারণ তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব এই অনুপ্রবেশকারীদের উপর নির্ভরশীল।

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসম সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ করেছে যে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্য বাঙালি-বিরোধী এবং এটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেছে, “বাংলা বিশ্বের সপ্তম সর্বাধিক কথিত ভাষা।

তবুও, বিজেপির শাসনের অধীনে, বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয়দের বর্ণবৈষম্য, লক্ষ্যবস্তুতে হয়রানি এবং পদ্ধতিগত নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।” তারা আরও বলেছে, “বাঙালিদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁর পদের মর্যাদাকে কলঙ্কিত করেছেন।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি বাঙালি অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে “প্রাতিষ্ঠানিক এবং ভাষাগত প্রোফাইলিং” করছে এবং “জাতীয় নিরাপত্তার নামে দারিদ্র্যের অপরাধীকরণ” করছে।

Advertisements

তিনি দিল্লির বসন্ত কুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনিতে বাঙালি অভিবাসীদের উচ্ছেদের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “বাংলা বলা মানেই কেউ বাংলাদেশি হয়ে যায় না।” তিনি এই ঘটনাকে বাঙালি-বিরোধী এজেন্ডা হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বত্র এই বিষয়টি উত্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের হুমকি

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বারবার জানিয়েছেন যে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা অসমের জনসংখ্যাগত ভারসাম্য পরিবর্তন করছে, যা আদিবাসী অসমীয়া জনগোষ্ঠীর জন্য হুমকি। তিনি বলেছেন, “এটি কেবল জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নয়, এটি আসামের আদিবাসীদের জন্য গুরুতর হুমকি।” তিনি আরও জানিয়েছেন, অসমে ২.৬৪ লক্ষ একরেরও বেশি সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই পূর্ব বাংলা বা বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ দখল করেছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই বিতর্ক ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে আরও তীব্র হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুকে বাঙালি গর্বের সঙ্গে জুড়ে একটি আবেগঘন নির্বাচনী বিষয়ে পরিণত করার চেষ্টা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ১৬ জুলাই কলকাতায় একটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সমিক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেছেন যে তৃণমূল কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করছে এবং তাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলে ভোটব্যাংক রাজনীতি করছে।

অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার লড়াই এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি জটিল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যেখানে হিমন্ত এবং শুভেন্দু এক যোগে এই ইস্যুকে জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনসংখ্যাগত অখণ্ডতার প্রশ্ন হিসেবে দেখছেন।

আইএসএল অনিশ্চিয়তার মধ্যেও এই টুর্নামেন্টকে পাখির চোখ করছে গোয়া

সেখানে মমতা এবং তৃণমূল কংগ্রেস এটিকে বাঙালি পরিচয়ের উপর আক্রমণ হিসেবে উপস্থাপন করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এই আস্ফালন শুধুই কি বাঙালিয়ানা রক্ষার জন্য। নাকি ভোটব্যাংক বাঁচানোর রাজনীতি তা বলবে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল।