কর ফাইল করার মরসুম এলেই আমাদের অনেকেই শেষ মুহূর্তে কর বাঁচানোর নানা উপায় খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ বন্ধুবান্ধবের থেকে পরামর্শ নিই, কেউ আবার ইন্টারনেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খুঁজে দেখি কোন স্কিমটি সবচেয়ে ভালো। এই তালিকায় পিপিএফ, ফিক্সড ডিপোজিট (FD) এবং আরও অনেক বিকল্প থাকলেও, একটি অপশন আছে যা আপনার টাকা বাঁচানোর পাশাপাশি সম্পদ বাড়ানোরও সুযোগ দেয় — সেটি হল ELSS বা ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম।
ELSS কী?
ELSS হল এক ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড, যা মূলত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে (অন্তত ৮০% অর্থ শেয়ারে বিনিয়োগ হয়)। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি একমাত্র মিউচুয়াল ফান্ড যা ভারতের আয়কর আইনের ৮০সি ধারার অধীনে কর ছাড়ের জন্য যোগ্য। অর্থাৎ, আপনি বছরে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ELSS-এ বিনিয়োগ করে কর ছাড়ের সুবিধা নিতে পারেন (শুধুমাত্র পুরনো ট্যাক্স রেজিমে)।
২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারির AMFI তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ৪৩টি ELSS স্কিম রয়েছে, যেগুলির মোট সম্পদ ব্যবস্থাপনার পরিমাণ (AUM) প্রায় ২.৩২ লাখ কোটি টাকা।
ELSS-এর বৈশিষ্ট্য:
ইকুইটি ভিত্তিক বিনিয়োগ: আপনার বেশিরভাগ টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হয়। ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে রিটার্নের সম্ভাবনাও বেশি।
কর সাশ্রয়: পুরনো ট্যাক্স রেজিমের অধীনে ৮০সি ধারায় ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ওপর কর ছাড়।
সবচেয়ে কম লক-ইন পিরিয়ড: মাত্র ৩ বছর। অন্য কর সাশ্রয়ী স্কিমগুলোর তুলনায় এটি সবচেয়ে কম।
নমনীয় বিনিয়োগ: এককালীন লাম্পসাম বিনিয়োগ বা মাসিক SIP-এর (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) মাধ্যমে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করা যায়, যা শুরু হতে পারে মাত্র ৫০০ টাকা থেকে।
বৈচিত্রপূর্ণ পোর্টফোলিও: ELSS ফান্ডগুলো বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করে এবং দক্ষ ফান্ড ম্যানেজারদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
লক-ইন পিরিয়ডের নিয়ম:
ELSS-এ বিনিয়োগের পর ৩ বছরের জন্য আপনার অর্থ লক হয়ে যাবে। অর্থাৎ, এই সময়ের আগে অর্থ তোলা যাবে না। যদি লাম্পসাম বিনিয়োগ করেন, তাহলে সেই দিনের থেকে তিন বছর গণনা শুরু হয়। অন্যদিকে, SIP-এর ক্ষেত্রে প্রতি মাসের কিস্তি আলাদা করে ৩ বছর লক থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি জানুয়ারি ২০২৫-এ ২,০০০ টাকা SIP করেন, সেটি জানুয়ারি ২০২৮-এ তুলতে পারবেন। পরবর্তী মাসের কিস্তির জন্যও একইভাবে সময় গণনা হবে।
কর সাশ্রয়ের সুবিধা:
যদি আপনি পুরনো কর কাঠামোর অধীনে থাকেন, তাহলে ৮০সি ধারায় সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ওপর ছাড় পেতে পারেন। এর ফলে সর্বোচ্চ ৪৬,৮০০ টাকা পর্যন্ত কর সাশ্রয় সম্ভব (৩০% ট্যাক্স স্ল্যাবে)।
তিন বছরের লক-ইন পরবর্তী রিটার্নের ওপর লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স (LTCG) প্রযোজ্য হয়। ১ বছরে ১ লক্ষ টাকার বেশি লাভের ওপর ১০% হারে কর দিতে হবে, তবে ১ লক্ষ পর্যন্ত লাভ করমুক্ত।
নতুন ট্যাক্স রেজিমে ELSS-এর অবস্থান:
নতুন ট্যাক্স রেজিমে ELSS-এ বিনিয়োগের ওপর ৮০সি ধারায় কোনো কর সাশ্রয় নেই। তবুও, ELSS অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় থেকে যাচ্ছে কারণ এতে মাত্র ৩ বছরের লক-ইন, শেয়ার মার্কেটের উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা এবং SIP-এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে বিনিয়োগের সুবিধা রয়েছে।
২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ELSS ফান্ডগুলো গড়ে প্রায় ১৪.৫% রিটার্ন দিয়েছে তিন বছরে, যা অন্য কোনো ট্যাক্স সেভিং স্কিমের চেয়ে বেশি।
কীভাবে ELSS-এ বিনিয়োগ করবেন?
১. কেওয়াইসি সম্পূর্ণ করুন: PAN, আধার এবং ব্যাংক ডিটেইলস দিয়ে আপনার KYC আপডেট করতে হবে।
২. ফান্ড বেছে নিন: ফান্ডের পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স, রেটিং এবং ফান্ড ম্যানেজারের দক্ষতা দেখে সঠিক ফান্ড বেছে নিন।
৩. মোড ঠিক করুন: এককালীন লাম্পসাম বা মাসিক SIP — যেটি আপনার পছন্দমতো।
৪. প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন: ট্রাস্টেড অ্যাপ, পোর্টাল বা সরাসরি ফান্ড হাউসের ওয়েবসাইট থেকে বিনিয়োগ করুন।
৫. মনিটর করুন: তিন বছরের লক-ইন শেষ হওয়ার পর বিনিয়োগ রিডিম করবেন নাকি চালিয়ে যাবেন, তা সিদ্ধান্ত নিন।
যদি আপনি কর সাশ্রয়ের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে চান, তবে ELSS একটি চমৎকার বিকল্প। ঝুঁকি কিছুটা বেশি হলেও, ফান্ড ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা এবং বাজারের সম্ভাবনা মিলিয়ে এই স্কিমটি অনেকের কাছেই সেরা কর সাশ্রয়ী বিনিয়োগের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। অতএব, করের মরসুমে এবার ভাবুন অন্যভাবে, ELSS-কে দিন একটি সুযোগ!