ফেক লোন অ্যাপ থেকে বাঁচতে জেনে নিন এই ৫টি সতর্কতা

Fake Loan App: আজকের দিনে স্মার্টফোনের মাধ্যমে পার্সোনাল লোন পাওয়া যেন হাতে গোনা কয়েকটি ট্যাপের ব্যাপার। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো, বারবার কাগজপত্র দেখানো বা অফিসে…

fake loan apps

Fake Loan App: আজকের দিনে স্মার্টফোনের মাধ্যমে পার্সোনাল লোন পাওয়া যেন হাতে গোনা কয়েকটি ট্যাপের ব্যাপার। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো, বারবার কাগজপত্র দেখানো বা অফিসে ঘুরে ঘুরে আবেদন করার দিন শেষ। তবে এই সহজলভ্য সুবিধার সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু গোপন ঝুঁকিও।

বর্তমানে বহু অনিয়ন্ত্রিত লোন অ্যাপ বাজারে চলে এসেছে, যারা কড়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে বা ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার করে। অনেকে আবার ঋণ শোধের সময় গ্রাহককে হেনস্থা করতেও পিছপা হয় না। ফলে এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করার আগে বিশেষ সতর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

   

এই প্রতিবেদনে আমরা এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার কথা তুলে ধরছি, যা আপনারা কোনো ডিজিটাল লোন অ্যাপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই মাথায় রাখবেন।

১. অ্যাপটি কি আইনি ভাবে রেজিস্টার্ড?
সবার আগে যাচাই করুন যে, লোন অ্যাপটি কোনো বৈধ ব্যাংক বা এনবিএফসি (Non-Banking Financial Company)-এর সঙ্গে যুক্ত কি না। ভারতে সব বৈধ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) নিয়ন্ত্রনের আওতায় থাকতে হবে।

অনিয়ন্ত্রিত অ্যাপগুলো প্রায়ই আইনের বাইরে কাজ করে এবং কোনো নিয়ম মেনে চলে না। ফলে এ ধরনের অ্যাপ থেকে লোন নিলে আপনাকে আর্থিক ও আইনি সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

আপনার করণীয়: RBI-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম খুঁজে বের করুন এবং যাচাই করুন এটি অনুমোদিত কি না।

২. চার্জ বা খরচ গোপন বা অস্পষ্ট:
বিশ্বস্ত লোন অ্যাপ সবসময় সুদের হার, লোনের মেয়াদ, প্রসেসিং ফি, বিলম্ব ফি এবং মোট ফেরত দেওয়ার পরিমাণের বিস্তারিত তথ্য স্পষ্টভাবে দেয়। কোনো তথ্য যদি অস্পষ্ট, লুকানো বা সহজে খুঁজে না পাওয়া যায়, সেটি বড় সতর্কবার্তা।
গোপন চার্জের ফলে আপনার ফেরত দেওয়ার টাকার পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে, যা আপনি প্রথমে অনুমানও করতে পারবেন না।
আপনার করণীয়: লোন অ্যাগ্রিমেন্টে সব শর্ত এবং চার্জ ভালোভাবে পড়ে তারপরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।

Advertisements

৩. অতিরিক্ত পারমিশন চাওয়া:
ভুয়া লোন অ্যাপ প্রায়ই আপনার ফোনের কন্ট্যাক্ট, ফটো, লোকেশন, ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনের অ্যাক্সেস চাইতে পারে। লোন প্রসেস করার জন্য এতগুলা পারমিশনের কোনো প্রয়োজন নেই।
এই ধরনের অনুমতি ব্যবহার করে অনেক সময় ঋণ শোধের সময় আপনাকে ব্ল্যাকমেল বা হেনস্থা করা হয়।
আপনার করণীয়: শুধুমাত্র আপনার প্যান বা আধার তথ্যের মতো প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য অ্যাক্সেস দিন। যেসব অ্যাপ অপ্রয়োজনীয় ডেটা চায়, সেগুলি এড়িয়ে চলুন।

৪. রেটিং, রিভিউ এবং অভিযোগ:
যদি কোনো অ্যাপের রেটিং কম থাকে, রিভিউ কম থাকে বা অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের খারাপ অভিজ্ঞতা দিয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য লোন অ্যাপের সাধারণত গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে ভালো রেটিং এবং বেশিরভাগ ইতিবাচক রিভিউ থাকে।
আপনার করণীয়: অ্যাপ ইনস্টল করার আগে ভালো করে রিভিউ পড়ুন, সামাজিক মাধ্যমে সেই অ্যাপ নিয়ে ব্যবহারকারীদের মতামত দেখুন।

৫. কোনো গ্রাহক সাপোর্ট নেই:
যে কোনো বৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর, ইমেল সাপোর্ট অথবা অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রাখে। যদি কোনো অ্যাপে এই ধরনের সাপোর্ট না থাকে, তাহলে সেটি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আপনার করণীয়: অফিসিয়াল ঠিকানা, সাপোর্ট কনট্যাক্ট এবং অভিযোগ জানানোর পদ্ধতি না থাকলে সেই অ্যাপ এড়িয়ে চলুন।
ডিজিটাল লেনদেন এবং অনলাইন লোন নেওয়া অবশ্যই সময় সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক। তবে এর ঝুঁকি রয়েছে। একটি ভুল সিদ্ধান্ত আপনার অর্থ এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।

যখনই কোনো লোন অ্যাপ ব্যবহার করবেন, তখন অবশ্যই সব তথ্য যাচাই করুন, শর্তাবলী মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং অতিরিক্ত পারমিশন চাওয়া অ্যাপ থেকে দূরে থাকুন। স্মার্ট ঋণগ্রহীতা হওয়া মানে শুধু সঠিক অ্যাপ বাছাই করা নয়, নিজের নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তিকেও সুরক্ষিত রাখা।

অতএব, সহজেই লোন নিয়ে আর্থিক চাপে না পড়ে, সতর্ক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। সঠিক অ্যাপ বেছে নিলে সাশ্রয় হবে, এবং আপনার গোপনীয়তা ও মানসিক শান্তিও বজায় থাকবে।