আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (RG Kar) আর্থিক দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছিল প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের। এবার সন্দীপ ঘোষ সহ পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করলেন আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক। দুর্নীতি দমনের ৪২০ ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৯ (বিশ্বাসভঙ্গ), ৪৬৭ ও ৪৬৮ (জালিয়াতি) এবং ৭ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২২ জুলাই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে হাজিরা দিতে হবে এই দুর্নীতি মামলার অভিযোগকারী দেবল ঘোষকে।
৯ অগস্ট ২০২৪-এ আর জি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনারহল থেকে চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারে দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়। ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। সেই সময়ই প্রকাশ্যে আসে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি করে দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই। সিবিআইয়ের চার্জশিটে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সুমন হাজরা এবং বিপ্লব সিং, জুনিয়র চিকিৎসক আশিস পাণ্ডে এবং দেহরক্ষী আশরফ আলি খানের নাম রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা প্রত্যেকেই জেলবন্দি। প্রসঙ্গত, প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই জালিয়াতি, প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ধারাতে চার্জ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ অভিযুক্ত আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি থেকে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শুনানির শেষেই বিচারক তাঁদের এই আবেদন খারিজ হয়ে দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে খবর, আগামী ২২ জুলাই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগকারী দেবল ঘোষকে প্রথম সাক্ষী হিসেবে তলব করা হয়েছে। আরজি করের এই ঘটনার সূত্র ধরেই হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন। আদালতের নির্দেশে তদন্তের ভার নেয় সিবিআই, যদিও ইডি তদন্তের দাবিও ওঠে। তবে এই ঘটনার অনেক আগেই আরজি করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন দেবল ঘোষ। অভয়া-কাণ্ডের পর সেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। জানা যাচ্ছে, আরজি কর হাসপাতালে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনার নামে টেন্ডার দুর্নীতি হয়েছিল আর জি করে। অভিযোগ অনুযায়ী, সন্দীপ ঘোষ নিজের ঘনিষ্ঠদের টেন্ডার পাইয়ে দিতেন।
গত বছর ২৯ নভেম্বর আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় আলিপুর আদালতে মামলার চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। প্রথমে সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতার করা হয়, পরে একে একে ধরা হয় সুমন, বিপ্লব, আশরফ ও আশিসকে।
উল্লেখ্য, আরজিকরে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নিম্ন আদালত। অন্যদিকে, ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। এই মামলায় গত বছর ডিসেম্বরে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষ এখনও জেলবন্দি রয়েছেন।