গুয়াহাটি ভিত্তিক নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি (NorthEast United FC)। যাঁরা ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোর একটি। তাঁদের যাত্রাপথে যেমন উত্থান রয়েছে, তেমনি রয়েছে নানা প্রতিকূলতা। তবে ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব এবং তরুণ প্রতিভা তুলে ধরার দিক থেকে এই ক্লাব বরাবরই অগ্রণী।
সাফল্যের নিরিখে মাত্র তিনবার প্লে-অফে পৌঁছনো ক্লাব, একাধিক প্রতিভাবান ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে। ইতিমধ্যে যাঁরা ক্লাবের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। দেখে নেওয়া যাক, ক্লাবের সর্বকালের সেরা আইএসএল একাদশ কেমন হতে পারে:
গোলকিপার : টিপি রেহনেশ (TP Rehenesh)
নর্থইস্ট ইউনাইটেডের শুরুর দিনগুলোতে গোলের নিচে রেহনেশ ছিলেন ক্লাবের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। পাঁচটি মরসুমে ৪৯ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১৩টি ক্লিন শিট এবং ১৪২টি সেভ করেছেন। গুরমিত সিং তাঁর জায়গার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠলেও, রেহনেশের স্থায়ীত্ব ও নির্ভরযোগ্যতার কারণে তিনি এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
রাইট ব্যাক: রেগান সিং (Reagan Singh)
৫টি মরসুমে ৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন রেগান, যাঁর পারফরম্যান্স ছিল ধারাবাহিক এবং শক্তিশালী। ২০১৮-১৯ মরসুমে দলকে প্রথমবার প্লে-অফে তুলতে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। অশুতোষ মেহতার পারফরম্যান্স চমকপ্রদ হলেও, রেগানের অবদান দীর্ঘমেয়াদী বলেই তিনি এগিয়ে।
লেফ্ট ব্যাক: গুরজিন্দর সিং (Gurjinder Singh)
দুই এবং অর্ধেক মরসুম ধরে গুরজিন্দর ছিলেন দলের নির্ভরযোগ্য বাম ব্যাক। বিশেষ করে ২০২০-২১ সালের প্লে-অফ অভিযানে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে বুয়ানথাংলুন সামতের উত্থান থাকলেও, ধারাবাহিকতার জন্য গুরজিন্দর এগিয়ে।
সেন্টার ব্যাক: মিশেল জাবাকো (Michel Zabaco) ও আশীর আখতার (Asheer Akhtar)
স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জাবাকো ক্লাবের অন্যতম সফল বিদেশি রক্ষণভাগের খেলোয়াড়। তাঁর নেতৃত্বে দল ২০২৪-২৫ মরসুমে প্লে-অফে উঠেছে এবং ৪২ ম্যাচে ১০টি ক্লিন শিটে সাহায্য করেছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন তরুণ ভারতীয় আশীর আখতার, যিনি গত দুই মরসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নিজেকে সেরা ভারতীয় সেন্টার ব্যাক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: মহম্মদ আলি বেমাম্মার (Mohammed Ali Bemammer)
মরক্কোর এই মিডফিল্ডার বর্তমান দলে থেকে রীতিমতো রূপান্তর এনেছেন। গত দুই সিজনে সর্বাধিক সফল পাস, ইন্টারসেপশন ও গেম রিডিংয়ে দক্ষ বেমাম্মার প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেঙে দিতে সিদ্ধহস্ত। খাসা কামারা ছিলেন বিকল্প, তবে বেমাম্মার আধিপত্য অসাধারণ।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: রাওলিন বর্জেস (Rowllin Borges)
২০১৮-১৯ মরসুমে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন বর্জেস। সেই মরসুমে ৪ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট করে দলকে প্রথমবার প্লে-অফে তুলেছিলেন। ডিফেন্সিভ ও অ্যাটাকিং— দুই ভূমিকায়ই সাবলীল ছিলেন তিনি।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: ফেদরিকো গালেগো (Federico Gallego)
উরুগুয়ের এই প্লেমেকার ছিলেন দলের হৃদয়। ৪৭ ম্যাচে ৯ গোল ও ১১ অ্যাসিস্ট করে দুইবার দলকে প্লে-অফে তুলেছেন। তাঁর অসাধারণ ভিশন, ক্রিয়েটিভিটি এবং গোল স্কোরিং অ্যাবিলিটি তাঁকে একাদশে অপরিহার্য করে তোলে।
রাইট উইঙ্গার: পার্থিব গগৈ (Parthib Gogoi)
সাম্প্রতিক তিন মরসুমে পার্থিব গগৈ জাতীয় স্তরে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৫৭ ম্যাচে ১০ গোল ও ৮ অ্যাসিস্টের মালিক এই তরুণ ফুটবলার দুর্দান্ত লং রেঞ্জ শটে পরিচিত। রিডিম ত্লাং ও ভিপি সুহাইর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, গগোই এগিয়ে।
লেফ্ট উইঙ্গার: জিথিন এমএস (Jithin MS)
জিথিন গত তিন মরসুমে নর্থইস্ট ইউনাইটেডে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে গেছেন। ১৫টি গোল অবদান ও তাঁর বহুমুখিতা তাঁকে একাদশে জায়গা করে দিয়েছে। ইমরান খানের চমৎকার ২০২০-২১ মরসুম সত্ত্বেও জিথিনের সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতা তাঁকে এগিয়ে রাখে।
সেন্টার ফরোয়ার্ড: আলাদিন আজারাই (Alaaeddine Ajaraie)
২০২৪-২৫ আইএসএল মরসুমে আজারায়ে করেছেন ২৩ গোল ও ৭ অ্যাসিস্ট আইএসএল ইতিহাসের রেকর্ড। তিনি শুধু ক্লাবের নয়, গোটা লিগের ইতিহাসে অন্যতম সফল ফরোয়ার্ড। বারথলোমিউ ওগবেচে ও ডেশর্ন ব্রাউনের মতো স্ট্রাইকারদের হারিয়ে এই একাদশে ঠাঁই পেয়েছেন তিনি।
হেড কোচ: হুয়ান পেদ্রো বেনালি (Juan Pedro Benali)
স্প্যানিশ কোচ বেনালি ২০২২-২৩ মরসুমে শেষ স্থানে থাকা দলকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে প্লে-অফে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর অধীনে দল জিতেছে ইতিহাসের প্রথম ডুরান্ড কাপও। তাই ১২ কোচের ভিড়ে তিনি নিঃসন্দেহে ক্লাবের সর্বকালের সেরা কোচ।
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিভা ও জেদকে তুলে ধরতে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি আজও সাহসী এক যাত্রাপথে। এই সর্বকালের সেরা একাদশ তাঁদের সংগ্রামের, সাফল্যের এবং সম্ভাবনার প্রতীক।
NorthEast United FC during ISL journey were represented by some exceptionally talented players