প্রতিভা হলুদের চাষ বদলে দিল ভাগ্য, কৃষিতে লাভের নতুন দিগন্ত

নয়াদিল্লি: দিল্লিতে একটি প্রাইভেট চাকরি ছেড়ে যখন কোঝিকোড়ের কোডুভাল্লিতে ফিরে এসেছিলেন মহম্মদ বুস্তানি, তখন ঠিক করেই ফেলেছিলেন, কিছু একটা ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু কী করবেন,…

pratibha turmeric success

নয়াদিল্লি: দিল্লিতে একটি প্রাইভেট চাকরি ছেড়ে যখন কোঝিকোড়ের কোডুভাল্লিতে ফিরে এসেছিলেন মহম্মদ বুস্তানি, তখন ঠিক করেই ফেলেছিলেন, কিছু একটা ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু কী করবেন, তা ছিল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সেই ধোঁয়াশা কাটে এক বিশেষ সাক্ষাতে।

ভারতীয় মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (IISR) টেকনিক্যাল অফিসার ও পুরনো পরিচিত ডঃ এস. হামজার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বুস্তানি বুঝতে পারেন, কৃষিই হতে পারে তার ভবিষ্যৎ পথ। সেই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন তিনি ও তাঁর পাঁচ বন্ধু ICAR-এর আওতায় পরিচালিত National Agricultural Innovation Project (NAIP)-এর একটি তিনদিনের সেমিনারে অংশ নেন।

   

সেই সেমিনারে কৃষকদের সাফল্যের গল্প শুনে তারা সিদ্ধান্ত নেন চাষ করবেন হলুদের, বিশেষ করে একটি নির্দিষ্ট জাত: ‘প্রতিভা’। এই হলুদ জাতটি কীট ও রোগ প্রতিরোধে সক্ষম এবং গুণগত মানেও অনেক এগিয়ে।

‘বুক্কা ফার্মস’-এর শুরু

প্রথম ধাপে তাঁরা ওয়ানাড় জেলার সুলতান বাথেরিতে এক একর জমি লিজে নেন এবং ‘বুক্কা ফার্মস’-এর পথচলা শুরু হয়। সেখানে প্রায় ১৭ টন তাজা হলুদ উৎপাদন হয়। নিজের ব্যবহারের জন্য ১০০ কেজি শুকনো হলুদ গুঁড়ো করার পরই বুস্তানি লক্ষ্য করেন রান্নার স্বাদ একেবারে অন্য রকম! স্ত্রীর প্রশংসায় তিনি বুঝে যান, প্রতিভা হলুদের গুণমান অসাধারণ।

এরপর আশেপাশের গৃহিণীদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র ‘সার্ভে’ চালান তিনি। সবার একই মত: প্রতিভা হলুদের গুঁড়ো যেন রান্নায় জাদুর মতো কাজ করে! সেখান থেকেই শুরু হয় বাণিজ্যিক চাষের পরিকল্পনা।

চলতি বছরে তাঁরা ওয়ানাড় জেলার ভেল্লামুণ্ডার কাছে পাজহায়নগাদিতে প্রায় ১৮ একর জমি লিজে নিয়ে শুধুমাত্র ‘প্রতিভা’ জাতের হলুদ রোপণ করেছেন। এই মুহূর্তে, বুক্কা ফার্মস-ই কেরালায় একক জাতের সবচেয়ে বড় হলুদ চাষের ক্ষেত্র হতে পারে।

উন্নত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক সহায়তা pratibha turmeric success

চাষের প্রতিটি ধাপে IISR-এর সুপারিশ অনুযায়ী বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন পেতে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘টার্গেটেড ইয়েল্ড’ প্রযুক্তি, যার সহ-উদ্ভাবক ডঃ ভি. শ্রীনিবাসন, ডঃ আর. দিনেশ এবং ডঃ এস. হামজা।

Advertisements

‘প্রতিভা’ জাতটি ২২৫ দিনে পরিপক্ব হয় এবং গড়ে ৩৯.১২ টন/হেক্টর ফলন দেয়, যার শুকনো রিকভারি ১৮.৯%। এতে কারকিউমিনের মাত্রা থাকে প্রায় ৬-৭ শতাংশ, যা এই জাতকে ঔষধি, রন্ধনশৈলী ও শিল্পক্ষেত্রে অগ্রগণ্য করে তোলে।

প্রযুক্তিতে ভরসা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট

শ্রমিক সংকট ও খরচ সামাল দিতে মেশিন ব্যবহার শুরু করেছেন বুস্তানি। বেড মেকার দিয়ে জমি সমতল করে চাষের কাজ অনেক সহজ হয়েছে প্রায় ৩০০ জনের শ্রম সাশ্রয় হয়েছে এতে। আগামীতে হলুদ সংগ্রহের জন্য ট্র্যাক্টরে লাগানো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ঘরোয়া ব্র্যান্ড গড়ার স্বপ্ন

বুস্তানি মনে করেন, প্রতিভা হলুদের গুঁড়ো একটি প্রিমিয়াম গৃহস্থালি ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। উন্নত স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মানের কারণে এর বাজারজাতকরণে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও, ২০১১ সালে IISR-এর আরেকটি প্রকল্পের আওতায় তিনি ‘ভারদা’ জাতের আদার বৈজ্ঞানিক চাষেও অংশ নেন এবং সেখানে সাফল্য পান। সেই অভিজ্ঞতা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে হলুদ চাষে বিনিয়োগে।

কৃষির মাটিতে আধুনিক চিন্তা

মহম্মদ বুস্তানির এই যাত্রা শুধুই একজন সফল কৃষকের গল্প নয়, বরং এটা এক যুবকের স্বপ্ন দেখা, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বিজ্ঞাননির্ভর কৃষির মাধ্যমে নিজের ও সমাজের জন্য কিছু করার এক নিটোল উদাহরণ। আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি উদ্ভাবনের মেলবন্ধন কীভাবে একটি উদ্যোগকে সাফল্যে রূপ দিতে পারে বুস্তানির বুক্কা ফার্মস তার অনন্য প্রমাণ।