মিলন পণ্ডা, খেজুরি: খেজুরি জুড়ে ফের রাজনৈতিক উত্তেজনা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা বনধকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি। বনধ (Khejuri Bandh) সফল করতে সকাল থেকেই পথে নামে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। অন্যদিকে, জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে মিছিল করে তৃণমূল নেতৃত্ব ও কর্মীরা। দুই পক্ষের কার্যকলাপ ঘিরে তৈরি হয় চাপা উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হতে হয় পুলিশকে।
শনিবার গভীর রাতে খেজুরি ২ নম্বর ব্লকের পশ্চিম ভাঙ্গনমারি গ্রামে মহরম উপলক্ষে একটি নৃত্যানুষ্ঠানে ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। অনুষ্ঠান চলাকালীন হ্যালোজেন লাইট খুলে পড়ে দুই দর্শকের উপর। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পূর্ব ভাঙ্গনমারির সুজিত দাস (২৩) ও ঝাঁটিহারি গ্রামের সুধীর চন্দ্র পাইপ (৬৫)-এর। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। শনিবার সকাল থেকেই মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে পৌঁছে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা এই দুর্ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে ডাকে ১২ ঘণ্টার বনধ। খেজুরি শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বনধ সমর্থনে অবরোধ, বিক্ষোভে নামে বিজেপি কর্মীরা। রাস্তার মাঝেই শুয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা, কিছু জায়গায় দাহ্য পদার্থে আগুন লাগানো হয়।
অন্যদিকে, এই বনধকে ‘অনৈতিক’ বলে কটাক্ষ করে রাস্তায় নামে তৃণমূল। খেজুরি ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ও যুব তৃণমূল সভাপতি জালাল উদ্দিন খান বলেন, “মৃত্যু দুঃখজনক হলেও তা নিয়ে রাজনীতি করা চলতে পারে না। খেজুরিতে কোনও বনধের প্রভাব পড়েনি, সমস্ত দোকান-বাজার স্বাভাবিক ছিল। বিজেপি খেজুরিকে উত্তপ্ত করে তুলতে চাইছে।”
তৃণমূলের এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, “পুলিশ সকাল থেকেই তৃণমূলের গুন্ডার মতো আচরণ করেছে। শান্তিপূর্ণ বনধ করলেও আমাদের ১৫ জন কর্মীকে বিনা কারণে আটক করা হয়েছে। খেজুরির মানুষ আমাদের পাশে ছিল, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।”
এই পরিস্থিতিতে খেজুরিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে জনজীবন। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকে, রাস্তাঘাট ফাঁকা। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর চালিয়েছে, কয়েকটি লরি লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৫ জনকে আটক করেছে।
রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝেই প্রশ্ন উঠছে, একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলি কতটা সুযোগ নিচ্ছে। মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো রাজনৈতিক শিষ্টাচার হলেও, তা নিয়ে রাস্তায় নেমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া গণতান্ত্রিক চর্চার বদলে এলাকাবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এখন দেখার, প্রশাসন এই ঘটনাকে কীভাবে সামাল দেয় এবং মৃতদের পরিবারকে কী ধরনের ক্ষতিপূরণ বা সহায়তা দেয় রাজ্য সরকার। স্থানীয়দের দাবি, খোলা তার ও নিরাপত্তাহীন হ্যালোজেন ব্যবস্থা ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল, যার অবহেলাই দুই প্রান কেড়ে নিল।