হাওড়া: ফের উত্তাল হতে চলেছে হাওড়া (Howrah) শহর। চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চ সোমবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়ায় একদিকে যেমন প্রশাসনিক তৎপরতা বেড়েছে, অন্যদিকে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছেন মঙ্গলাহাট এলাকার ব্যবসায়ীরা। কারণ, এই আন্দোলনের ফলে সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ দুই দিন—সোমবার ও মঙ্গলবার—তাঁদের ব্যবসায় ক্ষতির পরিমাণ মারাত্মক আকার নিচ্ছে।
নবান্ন অভিযানের নির্দিষ্ট রুটম্যাপ এখনও প্রকাশ না হলেও, হাওড়া (Howrah) সিটি পুলিশ রবিবার থেকেই নেমেছে সক্রিয় তৎপরতায়। শহরের চারটি প্রধান প্রবেশপথে (বঙ্গবাসী মোড়, রামকৃষ্ণপুর ঘাট গেট, কাজিপাড়া মোড় ও সাঁতরাগাছি মোড়) বসানো হয়েছে ভারী লোহার ব্যারিকেড। পাশাপাশি শিবপুর, মন্দিরতলা ও বেলেপোল এলাকাতেও ছোট ছোট গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। প্রতিটি মূল পয়েন্টে বসানো হয়েছে ২৫টি করে হাই রেজোলিউশনের সিসিটিভি ক্যামেরা, যাতে আন্দোলনের দিন কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়। মোতায়েন করা হয়েছে র্যাফ ও দুটি জলকামানও।
এছাড়াও বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট থেকে প্রায় দু’হাজার অতিরিক্ত পুলিশ কর্মী হাওড়ায় (Howrah) এনে মোতায়েন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তারা। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “রুটম্যাপ স্পষ্ট না হওয়ায় আমরা সমস্ত প্রবেশপথে নজরদারি করছি।”
এদিকে এই প্রশাসনিক প্রস্তুতির মধ্যেই রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতির (সেন্ট্রাল) সভাপতি মলয় দত্ত জানান, “চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও, বারবার সোম ও মঙ্গলবারকে নবান্ন অভিযানের দিন হিসেবে বেছে নেওয়ায় আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এদিন সকাল ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ফলে পুজোর আগে সবচেয়ে ব্যবসাসমৃদ্ধ দিনগুলোতেই বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে সোমবার মঙ্গলাহাটের একাধিক ব্যবসায়ী হাওড়া থানার সামনে ‘থানা ঘেরাও’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। তাঁদের দাবি, প্রশাসন যেন আন্দোলনের দিন ঠিক করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অসুবিধার দিকটি ভেবে দেখে।
চাকরিহারা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁদের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানানোর। তবে পুলিশি তৎপরতা এবং ব্যারিকেড বসানোকে “অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া” বলে মনে করছেন তাঁরা।
এভাবে প্রতি সপ্তাহে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য বারবার গুরুত্বপূর্ণ দিনের বেছে নেওয়া এবং ব্যবসা বন্ধের নির্দেশের ফলে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ী মহল। পুজোর মরশুম যত এগিয়ে আসছে, ততই চাপ বাড়ছে তাঁদের উপর।
এই পরিস্থিতিতে সোমবারের নবান্ন অভিযানে একদিকে যেমন বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠতে পারে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি নতুন চাপে ফেলতে পারে প্রশাসনকে। এখন দেখার, আন্দোলনকারীরা কতদূর যেতে পারেন আর প্রশাসন তা কিভাবে সামাল দেয়।