অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত সুখবর আসছে। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি সরকার ৮ম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) ঘোষণা করেছে। কমিশন কার্যকর হতে পারে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এর ফলে প্রায় লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনভোগীর বেতন ও পেনশনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হতে পারে। যদিও কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য নিয়োগ এবং বিস্তারিত Terms of Reference (ToR) এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি, তবুও এই ঘোষণায় সরকারি কর্মচারী মহলে খুশির হাওয়া বইছে।
তবে এই কমিশনকে ঘিরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি হলো “কমিউটেড পেনশন” বা এককালীন পেনশন নেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা কমানো। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের পেনশনভোগীরা অবসর গ্রহণের সময় তাঁদের মাসিক পেনশনের একটি অংশ এককালীন হিসাবে তুলে নিতে পারেন। এককালীন এই অর্থ গ্রহণের পরে, তাঁদের মাসিক পেনশন থেকে ওই অংশ কেটে নেওয়া হয়। এখন এই কাটা চলতে থাকে টানা ১৫ বছর ধরে। ১৫ বছর পরে পূর্ণ পেনশন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু পেনশনভোগী এবং বিভিন্ন ইউনিয়নগুলির দাবি, এই সময়সীমা ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১২ বছরে নামিয়ে আনা হোক। তাঁদের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়, ঔষধ ও চিকিৎসার খরচ ইত্যাদি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ফলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মাসিক পেনশনের কাটা চলতে থাকায় পেনশনভোগীরা আর্থিকভাবে চাপে পড়ছেন।
প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, National Council (JCM) – Staff Side, যেটি কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা সরকারের কাছে এই দাবি সহ একটি বিশদ চাহিদাপত্র জমা দিয়েছে। ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ বছরে পেনশন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
এই দাবিটি ২০২৫ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত Standing Committee on Voluntary Agencies (SCOVA)-এর বৈঠকেও উত্থাপিত হয়েছিল। সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মী ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
কেন ১৫ বছর থেকে ১২ বছরে কমানোর দাবি?
পেনশনভোগীদের বক্তব্য, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৫ বছর দীর্ঘ সময়। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের চিকিৎসা খরচ বেড়ে চলেছে, বাজারে মুদ্রাস্ফীতি লাগামছাড়া। উপরন্তু, ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হারও কমে গেছে। এর ফলে তাঁদের সঞ্চয়ের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। যদি ১২ বছরের মধ্যে পূর্ণ পেনশন পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে তাঁরা তুলনামূলকভাবে আর্থিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এবং ন্যায্য পরিমাণে পেনশন উপভোগ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, পেনশনভোগীরা অভিযোগ করছেন, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কমিউটেড পেনশনের কাটা চালিয়ে যাওয়া মানে তাঁদের অবসরকালীন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। কেউ কেউ এই বিষয়টিকে “অন্যায়মূলক” বলেও অভিহিত করেছেন।
সরকারের কাছে এই দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম বেতন কমিশনের সময়ও পেনশনভোগীদের বিভিন্ন দাবির উপর সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিল। ফলে এবারও সরকার তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৮ম বেতন কমিশন নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। কর্মচারীরা আশা করছেন, শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধিই নয়, বোনাস, মহার্ঘ ভাতা, পেনশন কাঠামো ও অন্যান্য সুবিধাও নতুন করে পুনর্বিবেচনা করা হবে। এর পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী কমিউটেড পেনশন পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময়সীমা কমানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করলে, তা এক বড় ধরনের স্বস্তি বয়ে আনবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সরকার এই দাবি মেনে নেয়, তবে প্রায় ৭০ লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হবেন। এতে তাঁদের মানসিক চাপ কমবে এবং জীবনের শেষ পর্বে কিছুটা হলেও আর্থিক নিশ্চয়তা ও সম্মান বজায় থাকবে।
এখন দেখার বিষয়, সরকার এই দাবিটি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং ৮ম বেতন কমিশনের Terms of Reference-এ তা অন্তর্ভুক্ত হয় কিনা। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবুও পেনশনভোগীরা এবং তাঁদের পরিবার এই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।
সবমিলিয়ে, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি এবং পেনশনভোগীদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তার নতুন দ্বার খুলে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। ৮ম বেতন কমিশনের এই প্রস্তাব ও সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে, তা ভারতীয় প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।