বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার রাজপথে নামছে আরএসএস

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতির মাটিতে ঝড় তুলতে চলেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)। হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ (Hindu Jagran) করতে এবং নিজেদের সংগঠনকে আরও…

RSS Launches Hindu Jagran Campaign in West Bengal Ahead of 2026 Elections

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতির মাটিতে ঝড় তুলতে চলেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)। হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ (Hindu Jagran) করতে এবং নিজেদের সংগঠনকে আরও বিস্তৃত ও সক্রিয় করে তুলতে এ বছর বিজয়া দশমী থেকে শুরু হচ্ছে এক বছরের হিন্দু জাগরণ অভিযান। এই কর্মসূচির সূচনা হবে মহালয়ার দিন থেকেই, যখন রাজ্যজুড়ে সংঘের হাজার হাজার স্বয়ংসেবক একযোগে রাস্তায় নামবেন।

হিন্দুদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার, হিন্দু সমাজে ঐক্যের বার্তা এবং সাংগঠনিকভাবে হিন্দু জনমানসকে প্রস্তুত করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে সংঘ। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই কর্মসূচির পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক বার্তাও, যা আগামী নির্বাচনের দিকেই ইঙ্গিত করছে।

   

মহালয়ার দিন বাংলার রাস্তায় সংঘ

মহালয়ার দিনে বাংলায় RSS-এর ‘বিশেষ কার্যক্রম’-এর আওতায় হবে ‘গণবেশে একত্রিকরণ’ এবং ‘পথসঞ্চালন’। কলকাতা থেকে শুরু করে মালদহ, বীরভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, নদিয়া, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ একাধিক জেলায় সংঘের শাখাগুলি ওই দিন পথে নামবে।

হাজার হাজার স্বয়ংসেবক ইউনিফর্ম পরে ব্যান্ড-বাজনা সহ শহরের রাস্তায় মিছিল করবেন। মহালয়ার মতো আবেগঘন দিনে সংঘের এই ধর্মীয়-রাজনৈতিক বার্তা নিঃসন্দেহে রাজনীতির আঁচ আরও বাড়াবে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।

২০০০ হিন্দু সম্মেলনের পরিকল্পনা

আগামী এক বছরে বাংলার মাটিতে ২০০০-রও বেশি হিন্দু সম্মেলন আয়োজন করবে RSS। এই সম্মেলনগুলিতে হিন্দুদের সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনা জাগানোর চেষ্টা করা হবে। সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা সভা, ধর্মীয় বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গীতিনাট্য ও পুরাণ পাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে হিন্দু ঐক্যের আহ্বান জানানো হবে। এক RSS নেতা বলেন, “বাংলায় হিন্দুরা সংখ্যায় অনেক হলেও ঐক্যের অভাবে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক হয়ে আছে। এই সম্মেলনগুলির মাধ্যমে সেই দুর্বলতাকেই শক্তিতে রূপান্তর করা হবে।”

‘প্রতি ঘর, প্রতি পাড়া, প্রতি গ্রাম’ কর্মসূচি

RSS এবার বাংলায় সরাসরি জনসংযোগ বাড়াতে চালু করছে নতুন মডেল — “প্রতি ঘর, প্রতি পাড়া, প্রতি গ্রাম”। এর অর্থ, স্বয়ংসেবকরা বাংলার প্রতিটি হিন্দু পরিবারে পৌঁছে যাবেন। ধর্মীয় অনুশীলন, সামাজিক আচরণ ও ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবেন।

এই ঘরভিত্তিক প্রচারে RSS মূলত তরুণ প্রজন্ম, গৃহিণী ও সাধারণ পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে হিন্দু সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই লক্ষ্য।

Advertisements

২২ আগস্ট বাংলায় আসছেন দত্তাত্রেয় হোসবলে

এই সমগ্র পরিকল্পনার রূপরেখা ঠিক করতে এবং কর্মসূচির গতি বাড়াতে আগামী ২২ আগস্ট বাংলায় আসছেন RSS-এর সর্বভারতীয় সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে। তাঁর সফরের সময় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

সূত্রের খবর, হোসবলের সফরে নতুন জেলায় শাখা খোলা, গ্রামীণ স্তরে সংগঠন বিস্তার এবং সহকারী সংগঠনগুলিকে কার্যকরভাবে সক্রিয় করার দিকনির্দেশ দেওয়া হবে।

হিন্দু জাগরণের আড়ালে রাজনৈতিক বার্তা?
RSS যদিও সরাসরি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানেনি, তবে রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই হিন্দু জাগরণ কর্মসূচির সঙ্গে পরোক্ষে রাজনৈতিক বার্তা জড়িত। বাংলার ভোট রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ নতুন কিছু নয়, এবং সংঘের এই পদক্ষেপ BJP-এর নির্বাচনী প্রস্তুতিরই একটা অংশ বলে মনে করছেন অনেকে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “RSS কখনও সরাসরি ভোটে অংশ নেয় না, কিন্তু তারা জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই এক বছর ধরে হিন্দুদের মনোজগতে যে বার্তা ঢোকানো হবে, তার প্রভাব পড়বে নির্বাচনে।”

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই RSS-এর এই কর্মসূচিকে “ধর্মীয় বিভাজনের প্রচেষ্টা” বলে কটাক্ষ করেছে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এরা আবার বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার আগুন ধরাতে চাইছে। আমরা বাংলার মাটি থেকে তা হতে দেব না।” তবে RSS বলছে, “আমরা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করি না। আমাদের লক্ষ্য শুধু হিন্দু সমাজের আত্মপরিচয় জাগিয়ে তোলা।”

বিধানসভা ভোট যতই এগিয়ে আসছে, বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে RSS-এর ‘হিন্দু জাগরণ’ অভিযান নিঃসন্দেহে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। মহালয়ার মতো আবেগঘন দিন থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি আদতে বাংলার মাটিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে একথা নিশ্চিত, সংঘের এই রাস্তায় নামা রাজনীতির মঞ্চে জোরালো সাড়া ফেলবে।