অসমের (Assam) বোকোর কাতালগাঁও গ্রামের তরুণ কৃষক প্রসেনজিত বোরো জৈব পেঁপে চাষের মাধ্যমে কৃষি জগতের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। দারি গ্রামে প্রায় ২০ বিঘা জমিকে জৈব পেঁপে চাষের একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে দৃঢ় সংকল্প এবং টেকসই চাষ পদ্ধতি সরকারি চাকরির বাইরে সাফল্যের একটি বিকল্প পথ তৈরি করতে পারে।
ইউটিউব থেকে শেখা এবং সম্প্রদায়ের উৎসাহে অনুপ্রাণিত এই উদ্যোগ এখন একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি প্রকল্পে রূপ নিয়েছে। এই প্রকল্প অসমের (Assam)যুব সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।প্রসেনজিত একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইউটিউবে কয়েকটি ভিডিও দেখার পর আমরা পেঁপে চাষের পরিকল্পনা করি।
এই ধারণা আমাকে এবং আমার বন্ধুদের অনুপ্রাণিত করেছিল। আমরা কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করি। সেখানে আমরা এসডিও গৌতম রায় চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করি, যিনি আমাদের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন। আজ আমাদের দলে ২০ জন মহিলা এবং ৮ জন পুরুষ রয়েছেন, যার মধ্যে ১১ জন সরাসরি খামারে কাজ করছেন।
আমরা নিশ্চিত যে আমাদের কঠোর পরিশ্রম শীঘ্রই ফল দেবে।”এই উদ্যোগের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে অসম (Assam)সরকারের কৃষি বিভাগ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান করেছে। শনিবার, একটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দল প্রসেনজিতের খামার পরিদর্শন করে অগ্রগতি মূল্যায়ন এবং আরও সহায়তার আশ্বাস দেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন জেলা কৃষি আধিকারিক মানব জ্যোতি দাস, সমিতি অসমের ডিরেক্টর রাজীব ভূঁইয়া এবং এসডিও গৌতম রায় চৌধুরী, সঙ্গে বোকো কৃষি দপ্তরের বেশ কয়েকজন আধিকারিক।এসডিও গৌতম রায় চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এটিকে সমর্থনকারী বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এই প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এটিএমএ (এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি) প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। আমরা দলটিকে উচ্চমানের বীজ এবং জমি সমতলকরণে সহায়তা প্রদান করেছি। এখন চাষ ফল (Assam) দেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে, এবং আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ফসল বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হবে।”
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চনী যোজনা (পিএমকেএসওয়াই)-এর আওতায় খামারটিতে ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে, যার জন্য ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা জলের দক্ষ ব্যবহার এবং উদ্যানপালনের টেকসই পদ্ধতি প্রচারে সহায়ক হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি টেকসই উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি মডেল প্রকল্প।”
জৈব চাষের গুরুত্ব
প্রসেনজিতের জৈব পেঁপে চাষের (Assam) উদ্যোগ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প নয়, বরং পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই কৃষির একটি উদাহরণ। জৈব চাষে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার এড়ানো হয়, যা মাটির উর্বরতা এবং ফসলের গুণমান রক্ষায় সহায়ক। এই প্রকল্পটি অসমের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। বিশেষ করে ২০ জন মহিলার এই প্রকল্পে সম্পৃক্ততা নারী ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সরকারি প্রকল্পের ভূমিকা
অসম সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি প্রসেনজিতের (Assam) এই উদ্যোগকে শক্তিশালী করেছে। এটিএমএ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত বীজ, প্রশিক্ষণ এবং বাজার সংযোগ।
পিএমকেএসওয়াই-এর আওতায় ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা জলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করছে, যা অসমের মতো অঞ্চলে, যেখানে জলের প্রাপ্যতা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পগুলি কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করছে এবং তাদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
প্রসেনজিতের এই উদ্যোগ অসমের (Assam) যুব সমাজের জন্য একটি নতুন পথ দেখাচ্ছে। সরকারি চাকরির উপর নির্ভরতা কমিয়ে কৃষিকে একটি সম্মানজনক ও লাভজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক। প্রকল্পটি স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এবং জৈব পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
সামাজিক মাধ্যমে এই উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে অনেকে প্রসেনজিত এবং তার দলের প্রশংসা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “প্রসেনজিতের গল্প আমাদের যুব সমাজকে কৃষির দিকে আকৃষ্ট করবে। এটি আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য একটি নতুন আশা।”
রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনীর প্রথম মহিলা মহানির্দেশক হিসেবে ইতিহাস গড়লেন সোনালি
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রসেনজিত এবং তার দলের সাফল্য সত্ত্বেও, জৈব চাষের পথে চ্যালেঞ্জের অভাব নেই। জৈব পণ্যের বাজার গড়ে তোলা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকারি সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করা সম্ভব। প্রসেনজিত বলেন, “আমরা শুধু পেঁপে চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। ভবিষ্যতে আমরা অন্যান্য জৈব ফসল এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্যের দিকেও এগোতে চাই।”
প্রসেনজিত বরোর জৈব পেঁপে চাষের উদ্যোগ অসমের কৃষি খাতে একটি নতুন দিগন্ত খুলেছে। এটিএমএ এবং পিএমকেএসওয়াই-এর মতো সরকারি প্রকল্পের সমর্থনে এই প্রকল্প টেকসই কৃষি, নারী ক্ষমতায়ন এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের একটি মডেল হয়ে উঠেছে।
এই গল্প শুধু প্রসেনজিতের (Assam) সাফল্যের নয়, বরং অসমের যুব সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণা, যারা কৃষিকে একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আগামী দিনে এই প্রকল্প কীভাবে আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।