GST কাউন্সিলের বৈঠকে বড় ছাড়ের সম্ভাবনা! কমছে AC ও খাবারের কর

সাধারণ এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য বড় সুখবর আনতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। শীঘ্রই GST কাউন্সিলের বৈঠকে একাধিক দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্যে কর কমানোর বিষয়ে আলোচনা হতে…

India Plans GST Reduction on Essential Commodities in 2025 to Ease Middle-Class Burden India Plans GST Reduction on Essential Commodities in 2025 to Ease Middle-Class Burden

সাধারণ এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য বড় সুখবর আনতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। শীঘ্রই GST কাউন্সিলের বৈঠকে একাধিক দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্যে কর কমানোর বিষয়ে আলোচনা হতে চলেছে। সরকারের এই পদক্ষেপের লক্ষ্যই হলো সাধারণ মানুষের পকেটের উপর চাপ কমানো এবং পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করা।

২০১৭ সালে চালু হওয়া গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (GST) কাঠামোকে পুনর্বিবেচনা করছে সরকার। বিশেষ করে ১২% করের স্তরে থাকা ভোগ্যপণ্যের ওপর কর কমানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এই কর স্তরে বর্তমানে মাখন, ঘি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মোবাইল ফোন, ফলের রস, আচার, জ্যাম, চাটনি, ডাবের জল, ছাতা, সাইকেল, টুথপেস্ট, জুতো ও জামাকাপড়ের মতো পণ্য রয়েছে। এই সব পণ্য প্রতিদিনের জীবনে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

   

সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “কর হার কমালে পণ্যের চাহিদা বাড়বে এবং এর ফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে। এতে আখেরে সরকারের আয়ও বাড়তে পারে। রাজস্ব ক্ষতির হিসাব শুধুমাত্র পরিসংখ্যানে দেখা উচিত নয়। চাহিদা বাড়লে সেই ক্ষতিও পূরণ করা সম্ভব।”

দামি পণ্যের করও কমতে পারে:
শুধু সাধারণ পণ্য নয়, দামি পণ্য যেমন এয়ার কন্ডিশনারের ওপরও কর কমানোর পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের উপর আর্থিক চাপ কমবে এবং এই ধরনের পণ্যের বিক্রি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিমায়ও আসছে বড় পরিবর্তন:
টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, পিওর টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্ল্যানের ওপর থাকা ১৮% GST পুরোপুরি তুলে দেওয়ার বিষয়েও সরকার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। বর্তমানে বিমা সংস্থাগুলি ১২% কর হার করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর কমালে মধ্যবিত্ত গ্রাহকেরা সহজে বিমা নিতেই উৎসাহী হবেন। স্বাস্থ্য বিমার ওপরও কর কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।

১২% কর স্তর পুরোপুরি বাতিলের পরিকল্পনা:
সরকার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১২% করের স্তরটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার কথাও ভাবা হচ্ছে। এর পরিবর্তে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত কিছু পণ্যের ওপর কর হার বাড়ানো হতে পারে, যাতে রাজস্বের ঘাটতি পূরণ করা যায়। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে এখনো বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। অনেক রাজ্য আশঙ্কা করছে, কর হার কমালে তাদের আয়ের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

Advertisements

কমপেনসেশন সেসের ভবিষ্যৎ:
GST চালুর পর রাজ্যগুলোর রাজস্ব ক্ষতি পূরণের জন্য চালু হওয়া কমপেনসেশন সেস ২০২৬ সালের মার্চে শেষ হতে চলেছে। এই ক্ষতি পূরণে ‘সিন গুডস’-এর ওপর নতুন সেস বসানোর কথা ভাবছে কেন্দ্র সরকার। সিন গুডস বলতে মূলত তামাক, পানের সিগারেট, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পণ্য বোঝানো হচ্ছে। এই সেসের মাধ্যমে রাজ্যগুলির রাজস্ব ঘাটতি মেটানো হবে।

রাজনৈতিক ঐকমত্যের চ্যালেঞ্জ:
GST কাঠামোর এই পরিবর্তনগুলোর মূল লক্ষ্য হলো একটি স্থায়ী এবং স্পষ্ট কর ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে বারবার পরিবর্তনের প্রয়োজন না পড়ে। এটি ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা আনবে, ফলে গ্রাহকরাও উপকৃত হবেন। তবে এই সমস্ত পরিবর্তন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতে একাধিক রাজ্য কর কমানোর বিরোধিতা করেছে, কারণ এতে তাদের রাজস্ব আয়ের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

চূড়ান্ত লক্ষ্য:
সব মিলিয়ে সরকারের লক্ষ্য হলো ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়া এবং অর্থনীতিতে গতি আনা। পণ্যগুলোর কর হার কমালে মানুষের খরচের ক্ষমতা বাড়বে, যা পরোক্ষভাবে উৎপাদন এবং ব্যবসায়িক চক্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে মহামারির পর থেকে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

GST কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে সরকার এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছে, যা ভবিষ্যতে স্থিতিশীল রাজস্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে এবং রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে আর্থিক সামঞ্জস্য রক্ষা করবে।

এখন দেখার বিষয়, আসন্ন GST কাউন্সিলের বৈঠকে ঠিক কতটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এবং রাজ্যগুলোর সঙ্গে কতটা সমন্বয় করে এই পরিবর্তনগুলো কার্যকর করা সম্ভব হয়। সাধারণ মানুষের জন্য এটি অবশ্যই একটি আশার খবর, কারণ প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমলে সরাসরি তাদের পরিবারের খরচ কমবে এবং সঞ্চয়ও বাড়বে।