ভারতে বাড়ি কেনা প্রতিটি মানুষের জন্যই একটি বড় আর্থিক পদক্ষেপ। তবে বর্তমান সময়ে মহিলাদের জন্য এই কাজটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে এখন মহিলারা সহজেই বাড়ির মালিক হতে পারছেন। কম সুদের হারের ঋণ (Home loan), ট্যাক্স সেভিংস, স্ট্যাম্প ডিউটির ছাড় এবং সাবসিডির মতো একাধিক সুবিধা তাদের জন্য চালু করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলির মূল উদ্দেশ্য হলো মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং তাদের সম্পত্তির মালিকানা বাড়ানো।
কম হোম লোন সুদের হার:
মহিলা ক্রেতাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলির একটি হলো হোম লোনে বিশেষ সুদের হার। অনেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান মহিলা ঋণগ্রহীতাদের জন্য ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.১ শতাংশ পর্যন্ত সুদের ছাড় দেয়। প্রথমে এই ছাড় সামান্য মনে হলেও, ২০-২৫ বছরের লোন মেয়াদে এটি থেকে বড় অঙ্কের সাশ্রয় হয়। যেমন, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI), এইচডিএফসি (HDFC), বাজাজ ফিনসার্ভের (Bajaj Finserv) মতো সংস্থাগুলি মহিলাদের জন্য এই সুবিধা দেয়। একজন মহিলা এককভাবে বা কো-অ্যাপ্লিক্যান্ট হিসেবে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
কম স্ট্যাম্প ডিউটি চার্জ:
বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় স্ট্যাম্প ডিউটি একটি আবশ্যিক কর, যা রাজ্যের রাজস্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অনেক রাজ্যে মহিলাদের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি পুরুষদের তুলনায় কম রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লিতে মহিলাদের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি ৪ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের জন্য এটি ৬ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে মহিলাদের জন্য ১ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে। এই ছাড়ের মাধ্যমে কয়েক হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব হয়, যা বাড়ি কেনার সময় বড় সুবিধা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PMAY)-এর সুবিধা:
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে, ক্রেডিট-লিঙ্কড সাবসিডি স্কিম (CLSS)-এ মহিলাদের কো-অনার বা যৌথ মালিক হিসেবে নাম নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। এই নীতির ফলে গ্রামের এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের মহিলাদের মধ্যে সম্পত্তির মালিকানা অনেকটা বেড়ে গেছে। এই স্কিমের অধীনে সর্বোচ্চ ২.৬৭ লাখ টাকা পর্যন্ত সাবসিডি পাওয়া যায়, যা একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারকে অনেক স্বস্তি দেয়।
ট্যাক্স সুবিধা:
মহিলা হোমবায়াররা ইন্টারেস্টের উপর ধারা ২৪(বি)-এর অধীনে বছরে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স ডিডাকশন পেতে পারেন। এছাড়াও, প্রিন্সিপালের উপর ধারা ৮০সি-এর অধীনে সর্বোচ্চ ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। যদি কোনো সম্পত্তি স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে কেনেন এবং দু’জনেরই আলাদা আয় থাকে, তাহলে দু’জনই এই সুবিধা আলাদাভাবে উপভোগ করতে পারবেন। এটি বিশেষভাবে সেই দম্পতিদের জন্য উপকারী, যারা একসাথে বিনিয়োগ করে বড় অঙ্কের ঋণ শোধ করছেন।
সহজে ঋণ প্রাপ্তি:
বর্তমানে বহু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে মহিলাদের টার্গেট করে বিভিন্ন ঋণ প্রকল্প চালু করেছে। এর ফলে মহিলা ঋণগ্রহীতাদের জন্য হোম লোন পাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। সহজ ডকুমেন্টেশন, প্রায়োরিটি প্রসেসিং, এবং মহিলা গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কাস্টমার সার্ভিসের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে একজন মহিলা খুব সহজেই ঋণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারেন এবং তাদের বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
সম্পত্তি মালিকানা বৃদ্ধির প্রয়াস:
এই সমস্ত সুবিধা ও উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দেশের মহিলাদের সম্পত্তির মালিকানা বাড়ানো। এখনো অনেক মহিলার আর্থিক ক্ষমতা সীমিত এবং সামাজিক কারণে তারা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। সরকার ও ব্যাংকের এই ধরনের প্রণোদনা মহিলাদের আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। এতে তাদের সামাজিক মর্যাদাও বাড়ে এবং পরিবারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে সক্ষম হন।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
বর্তমান ট্রেন্ড অনুযায়ী, মহিলাদের মধ্যে হোম লোন নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই প্রথমবার বাড়ি কিনতে এগিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে, যৌথভাবে স্বামীর সঙ্গে মালিকানা ভাগাভাগি করে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ বাড়ছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু মহিলারা নয়, পুরো পরিবার এবং সমাজ আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
মহিলাদের জন্য বাড়ি কেনার এই বিশেষ সুবিধাগুলি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা ও তথ্যের মাধ্যমে যে কোনো মহিলা ক্রেতা তার বিনিয়োগকে আরও লাভজনক ও নিরাপদ করে তুলতে পারেন। ফলে, দেশের আর্থিক কাঠামোতে মহিলাদের অবদান ক্রমেই বাড়তে থাকবে।