দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় পার্বত্য শহর, যা “পাহাড়ের রানী” নামে পরিচিত। এখানে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়াও, দার্জিলিং তার বিখ্যাত চা বাগান, ঐতিহ্যবাহী টয় ট্রেন এবং মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। বৈশ্বিক বাজারে দার্জিলিং-চা এর সুনাম রয়েছে অনেকটাই। অথচ কালের নিয়মে বাজারে অস্তিত্বের সংকটে লড়াই করছে এই দার্জিলিং-চা।
জানা যাচ্ছে, চা উৎপাদন ক্রমশ কমছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যেখানে আগে ১০০ কেজি চা পাতা উৎপাদন হতো, এখন সেখানে উৎপাদন নেমে যাচ্ছে ৬০ কেজিতে — প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে চা পাতা উৎপাদন। এর বড় কারণ হিসেবে উঠে আসছে বাগান বন্ধ। এছাড়াও রয়েছে শ্রমিক সংকট সহ খরচ বৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলিও। আবার আবহাওয়া পাল্টাতে শুরু করায় কমেছে কাঁচা পাতার গুনগত মানও।
রাশিয়া-ইউক্রেন, ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ থামলেও স্বাভাবিক হয়নি রপ্তানি বাণিজ্য। জার্মানিতেও রপ্তানি বাণিজ্যে ভাটার টান। বিপর্যয়ের মুখে দার্জিলিং-সহ উত্তরের চা শিল্প। লোকসানের ধাক্কা উত্তরবঙ্গের এই শিল্পে। এর কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে, চায়ের দাম দার্জিলিং চা-র তুলনায় ৪০–৫০% কম। ফলে লোকাল মার্কেটে নেপালের চা সহজেই বিক্রি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নেপালের চা মিশিয়ে দার্জিলিং চা নামেই বিক্রি হচ্ছে দেশি বাজারে — এতে দার্জিলিংয়ের আসল চা তার পরিচয় হারাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১৪ টি চা বাগান। এর ফলে চা বাগানের মালিক বা শিল্পপতিদের সঙ্গে সমস্যায় পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার। উৎপাদন কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হচ্ছে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, অসুবিধায় পড়ছে পরিবারগুলি।
চা শিল্পের সাথে যুক্ত একাংশের মতে, আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন, নকল চা বন্ধে কড়া নিয়ন্ত্রণ আর উৎপাদন বাড়াতে সরকারের সহায়তা একান্তভাবে প্রয়োজন। এই সহায়তা ছাড়া দার্জিলিং-এর চা-এর সুনাম বজায় রাখা যাবে না।