কলকাতার হৃদপিণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ঐতিহাসিক নির্মাণ — হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge)। প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষের বেশি গাড়ি এবং ১.৫ লক্ষ পথচারীর চলাচল হয় এই সেতুর উপর দিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি জানা গিয়েছে, হাওড়া ব্রিজের শরীরও খারাপ হতে পারে! সেই কারণেই দীর্ঘ ত্রিশ বছরের ব্যবধানে এবার সেতুটির একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট এবার জমা পড়েছে বন্দরে।
এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল দেশের অন্যতম রেল ও পরিকাঠামো সংস্থা RITES (Rail India Technical and Economic Service)। ১৯৮৩-১৯৮৮ সালের পরে এই প্রথম আবার এই ধরনের হেলথ অ্যাসেসমেন্ট করা হল রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজের।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেতুর ডেক সারফেস এবং জয়েন্টগুলিতে বেশ কিছু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা প্রয়োজন। সেই কাজ আগামী দেড় বছর ধরে ধাপে ধাপে চালানো হবে। ব্রিজের (Howrah Bridge) লোহার কাঠামো এবং স্তম্ভগুলির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কিছু জায়গায় সারাই, পরিবর্তন বা মেরামতির সুপারিশ করা হয়েছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এবার থেকে সেতুর স্বাস্থ্য রোজ নজরে রাখবে ডিজিটাল সেন্সর। এই বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে রোজ ব্রিজের গঠনগত অবস্থা, কম্পন, চাপ, এবং তাপমাত্রা মাপা যাবে। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (Syama Prasad Mookerjee Port) জানিয়েছে, স্মার্ট সেন্সর ব্যবহার করে প্রতিদিন ব্রিজের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেতুটি কলকাতা এবং হাওড়া জেলার মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এছাড়া, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও চিত্রনৈপুণ্যের প্রতীক। বহু সিনেমা, চিত্রকলা, সাহিত্যে হাওড়া ব্রিজ বারবার উঠে এসেছে। এই ব্রিজ ছাড়া যেন কলকাতাকে কল্পনা করাই যায় না।
এমন একটি স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা শুধুই প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, এটি শহরের গর্ব এবং ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্বও বটে। হাওড়া ব্রিজের ইতিহাসও কম আকর্ষণীয় নয়।
১৯২৬ সালে আর.এন. মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিশন হুগলি নদীর উপর একটি ঝুলন্ত সেতুর সুপারিশ করেছিল। সেই অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৪৩ সালে এই আইকনিক ব্রিজ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়। এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত সেতু হিসাবে হাওড়া ব্রিজ নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
হাওড়া ব্রিজ শুধু একটি লৌহনির্মিত সেতু নয়, এটি একটি জীবন্ত শহরের প্রতীক। দীর্ঘদিন পর তার ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করা হলো এবং রিপোর্ট অনুসারে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ব্রিজের ভবিষ্যৎ আরও সুরক্ষিত ও স্মার্ট হবে, এমনটাই আশা করা যায়।