কৃষিখাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

কলকাতা: ভারতবর্ষে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জীবিকার জন্য কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে চাষের কাজ। বারবার তাপপ্রবাহের প্রত্যাবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ…

Climate Impact Indian Farming

কলকাতা: ভারতবর্ষে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জীবিকার জন্য কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে চাষের কাজ। বারবার তাপপ্রবাহের প্রত্যাবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ খরার সময়কাল এবং আকস্মিক বন্যা ফসল উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। শুধু কৃষক নয়, এর প্রভাব পড়ছে দেশের খাদ্যব্যবস্থা, পুষ্টি এবং বাজারমূল্যের উপরও।

খাদ্যনিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের খাদ্যনিরাপত্তা আজ এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গম ও ধানের উৎপাদন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাপমাত্রা ২.৫ থেকে ৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে গমের ফলন কমে যেতে পারে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত। একইভাবে ধানের উৎপাদনও কমবে উল্লেখযোগ্যভাবে।

   

সর্বাধিক ক্ষতির মুখে রয়েছেন ছোট ও প্রান্তিক কৃষকরা, যারা মোট কৃষক জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের বেশি। এদের অধিকাংশই বর্ষার জলের উপর নির্ভরশীল এবং পর্যাপ্ত সেচ, ক্রেডিট, বিমা বা বাজার সংযোগের সুবিধা পান না। মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ বা উত্তরাখণ্ডের মতো অঞ্চলে নারীরা ও দলিত কৃষকরা দ্বিগুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কারণ তারা চাষের জন্য পান অনুৎপাদনশীল ও অনিরাপদ জমি।

একাধিক সমস্যা Climate Impact Indian Farming

মাটি ও জলসম্পদের অবক্ষয় কৃষির টেকসইতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। একদিকে মাটির উর্বরতা কমছে, অন্যদিকে জ্বালানি ও রাসায়নিক সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ, যার ফলে ফলন আরও কমছে।

সমস্যার সমাধানে যেসব পথ খোলা রয়েছে

তবে আশার কথা হলো, নানা প্রান্তে নানা ধরনের স্থানীয় ও সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ কৃষিকে জলবায়ু সহনশীল করে তুলতে সহায়ক হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ:

জিরো টিলেজ (চাষের আগে মাটি না খুঁড়ে বপন) পদ্ধতি ইতোমধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে অনেক কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

Advertisements

বহুমুখী ফসল চাষ ও মিলেট উৎপাদন (যেমন রাগি, কুটকি) যা পুষ্টিকর, জল-সহনশীল এবং খরায় টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে ভবিষ্যতের কৃষির জন্য সম্ভাবনাময়।

অর্গানিক ও রিজেনারেটিভ ফার্মিং ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো এবং মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব। নারী স্বনির্ভর গোষ্ঠী (SHG) ভিত্তিক উদ্যোগ যেমন PRADAN এবং SSP এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রে মহিলারা চাষের নতুন পদ্ধতি রপ্ত করছেন এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পথ তৈরি করছেন।

খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির ওপর প্রভাব

ফসল কমে যাওয়ায় খাদ্য সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে এবং মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারী ও শিশুরা মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খাদ্য সংকটে প্রথমে না খেয়ে থাকে মহিলারাই-যা জলবায়ু ঝুঁকির সময় তাদের ঝুঁকি আরও বাড়ায়।

জলবায়ু পরিবর্তন ভারতের কৃষিকে যেভাবে পরিবর্তন করছে, তা শুধু উৎপাদন নয়,সমগ্র খাদ্যব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করছে। এই সংকটে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন প্রান্তিক কৃষকদের জন্য টার্গেটেড সহায়তা, বাজারে প্রবেশাধিকার, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং নারী-কৃষকদের ক্ষমতায়ন।